ছাতকে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে অনেকটা ধীরগতিতেই। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত বরাদ্দের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রকল্প কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) প্রকল্পগুলো কোথাও ৭০ ভাগ, আবার কোথাও ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু এলাকায় বাঁধের ঘাস সংগ্রহ করতে ভোগান্তিতে পড়েছে কমিটি। এসব প্রকল্পের কয়েকটি কাজ দৃশ্যমান হলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজের গতি কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে পিআইসি কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কাজ শুরুর পর প্রথম কিস্তির মাত্র ২৩ ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ২য় কিস্তির টাকা পরিশোধ করা দরকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র মতে, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধের ভাঙন বন্ধ করা বা মেরামতের জন্য ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।
পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় পিআইসি বাস্তবায়ন কমিটির হিসাবে গড়ে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২৮টি প্রকল্পের অধীনে উপজেলার নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কমিটি গঠনে দেরি হয়। বাঁধের কাজের জন্য এলাকার স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও অধিকাংশ কমিটি গঠন করা হয়েছে আগের মতোই রাজনৈতিক বিবেচনায়। 
রোববার সরেজমিন হাওরের একাধিক বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় দিনমজুর ও কৃষকরা নাইন্দার, মাছুখাল, ডেকার হাওর, মির্জাখাল ও কুড়িবিলের ক্লোজারের কাজে ব্যস্ত। বাঁধগুলোতে ড্রেসিং স্লোপিং ও ঘাস লাগিয়ে পানি দেওয়ার কাজ চলছে। তবে বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন বাঁধের আশপাশে ঘাস না থাকায় পিআইসির প্রকল্পের লোকজন বেশ কষ্টে পড়েছেন।
কৃষকরা জানান, স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিয়মিতই প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হচ্ছে। বিশাল ডেকার হাওরের বাঁধটি বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ হাওরটি ছাতক উপজেলা ছাড়াও দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় বাঁধের পাশাপাশি এটি ক্লোজার হিসেবে পরিচিত। 
১ নম্বর পিআইসি কমিটির সদস্য আবদুর নুর জানান, এখানে মাটির কাজ শেষ। ঘাস না পাওয়ায় কাজ দেরি হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে। ২৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি নোয়ারাই ইউনিয়নের কচুদাইড় এলাকার বাসিন্দা বদরুল আলম জানান, মাটির কাজ শেষ। এখন ড্রেসিং ও স্লোপিংয়ের কাজ চলছে। আরেক কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হলে কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে।
জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১৬ নম্বর পিআইসির বুকার ভাঙ্গা-চেচান প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, কমিটি গঠন শেষে কার্যাদেশ পাওয়ার পর হাওরে বাঁধের কাজ দ্রুতগতিতেই চলছে। এখানে বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্লোপিং ও ড্রেসিং চলমান। 
একই ইউনিয়নের রাউলি গ্রামের বাসিন্দা ১৮ নম্বর পিআইসির প্রকল্পের সভাপতি জাবের আহমদ তইমুছ জানান, মাটির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ড্রেসিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২৫ নম্বর পিআইসির সাহেব খাল বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মাটির কাজ শেষ, শুধু ঘাস লাগানোর কাজ বাকি। ঘাস অনেকদূর থেকে সংগ্রহ করে পানি আনতে হবে। মাত্র একটি বিল পেয়েছেন তারা। দ্রুত আরেক কিস্তির বিল দিলে কাজের সুবিধা হবে।
২৮টি পিআইসি প্রকল্পের মধ্যে নোয়ারাই ইউনিয়নের অতি গুরুত্বপূর্ণ নাইন্দার হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় মাছুখাল ক্লোজারটির জন্য এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করা যায়নি। মূলত এখানে খালের মুখ দিয়ে বেশ পানি প্রবাহিত হওয়ায় কাজ শেষ করতে কিছুটা দেরি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 
উপজেলা ‘হাওর বাঁচাও আন্দেলন’ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ্‌ মো.

আখতারুজ্জামান জানান, পিআইসিগুলোর হিসাব অনুযায়ী গড়ে বাঁধের ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে। হাওরে কৃষকের কষ্টের ফসল রক্ষায় কমিটি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলেই যথাসময়ে নিশ্চিন্তে বোরো ফসল গড়ে তোলা সম্ভব। 
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ও কাবিখা কমিটির সদস্য সচিব মাসুম চৌধুরী জানান, নিয়মিতই পিআইসি বাঁধের কাজ মনিটর করছেন তারা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র কম ট র স র জন য শ ষ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ