কাজের গতি নিয়ে কৃষকের টাকা নিয়ে পিআইসির ক্ষোভ
Published: 17th, February 2025 GMT
ছাতকে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে অনেকটা ধীরগতিতেই। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত বরাদ্দের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রকল্প কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) প্রকল্পগুলো কোথাও ৭০ ভাগ, আবার কোথাও ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু এলাকায় বাঁধের ঘাস সংগ্রহ করতে ভোগান্তিতে পড়েছে কমিটি। এসব প্রকল্পের কয়েকটি কাজ দৃশ্যমান হলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজের গতি কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে পিআইসি কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কাজ শুরুর পর প্রথম কিস্তির মাত্র ২৩ ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ২য় কিস্তির টাকা পরিশোধ করা দরকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র মতে, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধের ভাঙন বন্ধ করা বা মেরামতের জন্য ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।
পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় পিআইসি বাস্তবায়ন কমিটির হিসাবে গড়ে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২৮টি প্রকল্পের অধীনে উপজেলার নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কমিটি গঠনে দেরি হয়। বাঁধের কাজের জন্য এলাকার স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও অধিকাংশ কমিটি গঠন করা হয়েছে আগের মতোই রাজনৈতিক বিবেচনায়।
রোববার সরেজমিন হাওরের একাধিক বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় দিনমজুর ও কৃষকরা নাইন্দার, মাছুখাল, ডেকার হাওর, মির্জাখাল ও কুড়িবিলের ক্লোজারের কাজে ব্যস্ত। বাঁধগুলোতে ড্রেসিং স্লোপিং ও ঘাস লাগিয়ে পানি দেওয়ার কাজ চলছে। তবে বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন বাঁধের আশপাশে ঘাস না থাকায় পিআইসির প্রকল্পের লোকজন বেশ কষ্টে পড়েছেন।
কৃষকরা জানান, স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিয়মিতই প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হচ্ছে। বিশাল ডেকার হাওরের বাঁধটি বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ হাওরটি ছাতক উপজেলা ছাড়াও দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় বাঁধের পাশাপাশি এটি ক্লোজার হিসেবে পরিচিত।
১ নম্বর পিআইসি কমিটির সদস্য আবদুর নুর জানান, এখানে মাটির কাজ শেষ। ঘাস না পাওয়ায় কাজ দেরি হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে। ২৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি নোয়ারাই ইউনিয়নের কচুদাইড় এলাকার বাসিন্দা বদরুল আলম জানান, মাটির কাজ শেষ। এখন ড্রেসিং ও স্লোপিংয়ের কাজ চলছে। আরেক কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হলে কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে।
জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১৬ নম্বর পিআইসির বুকার ভাঙ্গা-চেচান প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, কমিটি গঠন শেষে কার্যাদেশ পাওয়ার পর হাওরে বাঁধের কাজ দ্রুতগতিতেই চলছে। এখানে বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্লোপিং ও ড্রেসিং চলমান।
একই ইউনিয়নের রাউলি গ্রামের বাসিন্দা ১৮ নম্বর পিআইসির প্রকল্পের সভাপতি জাবের আহমদ তইমুছ জানান, মাটির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ড্রেসিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২৫ নম্বর পিআইসির সাহেব খাল বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মাটির কাজ শেষ, শুধু ঘাস লাগানোর কাজ বাকি। ঘাস অনেকদূর থেকে সংগ্রহ করে পানি আনতে হবে। মাত্র একটি বিল পেয়েছেন তারা। দ্রুত আরেক কিস্তির বিল দিলে কাজের সুবিধা হবে।
২৮টি পিআইসি প্রকল্পের মধ্যে নোয়ারাই ইউনিয়নের অতি গুরুত্বপূর্ণ নাইন্দার হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় মাছুখাল ক্লোজারটির জন্য এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করা যায়নি। মূলত এখানে খালের মুখ দিয়ে বেশ পানি প্রবাহিত হওয়ায় কাজ শেষ করতে কিছুটা দেরি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা ‘হাওর বাঁচাও আন্দেলন’ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো.
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ও কাবিখা কমিটির সদস্য সচিব মাসুম চৌধুরী জানান, নিয়মিতই পিআইসি বাঁধের কাজ মনিটর করছেন তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র কম ট র স র জন য শ ষ কর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’