ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরের প্রধান সড়ক অবরোধ করায় স্থবির হয়ে পড়েছে সীমান্ত বাণিজ্য। পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহাকুমার ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় পার্কিং মালিকেরা বৈষম্যের শিকার দাবি করে মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। 

এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর ভোমরা-ঘোজাডাঙ্গা বন্দর। সীমান্তের এই বন্দর হয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে যায়। কিন্তু ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই সীমান্তে কোনো সরকারি পার্কিং নেই। ফলে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো মূলত বেসরকারি পার্কিং ব্যবহার করে। এভাবেই একে একে ৮৪টা বেসরকারি পার্কিং গড়ে উঠেছে সীমান্ত এলাকায়। 

এসব পার্কিংয়ের মালিকরা কেউ জমি কিনে, কেউ জমি লিজ নিয়ে, কেউ আবার নিজের পারিবারিক জমিতেই পার্কিং ব্যবসা করছেন। তাদের অভিযোগ- মাহাদিপুর-সোনামসজিদ সীমান্তে যেখানে পার্কিংয়ের জন্য প্রতিদিন ট্রাকপিছু গুনতে হয় অন্তত ৮০০ রুপি, সেখানে ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তের ক্ষেত্রে ট্রাকের পার্কিং ফি মাত্র ৪০০ রুপি। তারপরেও সরকারি ‘সুবিধা’ পোর্টালে তিন বছরের বেশি সময় আটকে রয়েছে পার্কিং মালিকদের কয়েক লাখ রুপি।

২০২২ সালে রাজ্য সরকারের সীমান্ত বাণিজ্যে ব্যবহৃত সরকারি পোর্টাল ‘সুবিধা’তে অন্যান্য সীমান্তের মতোই এই সীমান্ত বন্দরের পার্কিং ওনার’স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন তাদের সদস্যদের নাম নথিভুক্ত করে। সংগঠনটির দাবি, সরকারি তরফে সেই সময় বলা হয়েছিল ট্রাক মালিকদের থেকে পার্কিং চার্জ বাবদ টাকা সরকারের তরফ থেকেই কেটে নেয়া হবে। নির্ধারিত সময় পর সেই টাকা নির্দিষ্ট পার্কিং মালিকের অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। সংগঠনটির অভিযোগ- প্রায় তিন বছর অতিক্রম করলেও পার্কিং মালিকদের ৪১ লাখ রুপি আজও ফেরত আসেনি তাদের অ্যাকাউন্টে। 

ঘোজাডাঙ্গায় ২৯৫ বিঘা জমির ওপর মোট ৮৪টি বেসরকারি পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে অন্তত ৪০০০ শ্রমিক পরিবার। দীর্ঘসময় ধরে সরকারি দপ্তরে এসব পার্কিং মালিকদের টাকা আটকে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়েছে সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা। টাকা ফেরত চেয়ে ইতিমধ্যেই তারা জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, এমনকি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পর্যন্ত যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই না হওয়ায় অবশেষে সীমান্ত বন্দরের প্রধান সড়ক অবরোধের মতো পদক্ষেপে হাঁটলেন তারা। 

মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, সংগঠনটির দুই শতাধিক সদস্য ও কর্মীরা সীমান্ত বন্দরের চেকপোস্টের কাছে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এমন ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এসে বসিরহাট থানার পুলিশ। কিন্তু অবরোধ তোলা যায়নি। 

ঘোজাডাঙ্গা পার্কিং ওনার’স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিত্যানন্দ মন্ডল, সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও মিহির ঘোষ জানান, রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত বন্দরে সরকারি সীমান্তে পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত বন্দরের সরকারি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় গত ২৫ বছর ধরে বেসরকারি পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কিন্তু অন্যান্য সীমান্ত বন্দরের তুলনায় আর্থিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এই সীমান্ত বন্দরের পার্কিং মালিকরা। অন্যদিকে ন্যায্য পাওনা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছে। এতে সীমান্ত এলাকায় পার্কিংয়ের নজরদারি চালাতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব পার্কিংয়ে কর্মরত প্রায় চার হাজার মানুষ তারাও ঠিকমতো মাসিক বেতন পাচ্ছেন না।  এমন অবস্থায় আজ বাধ্য হয়েই রাস্তার নেমেছেন তারা। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারিভাবে বিষয়টির সুরাহা না করা হবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে বলেই হুমকি তাদের।

কলকাতা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ ব সরক র অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত

ভোলায় গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে চলমান ছয় দফা আন্দোলন স্থগিত করেছে ‘আমরা ভোলাবাসী’। সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও আমরা ভোলাবাসীর জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য রাইসুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ভোলা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. কামাল হোসেন ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্যসচিব মীর মোশাররফ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।

আমরা ভোলাবাসীর দাবির মধ্যে রয়েছে, ভোলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করা, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও নদীভাঙন প্রতিরোধ।

সংগঠনটি জানায়, আন্দোলনের আগে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মাত্র আট চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। আরও চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন মেডিকেল কলেজ হলে, সেটি ভোলায় হবে। ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। গ্যাস–সংযোগের বিষয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ২ হাজার ১৪৫ গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে এবং ন্যায্যমূল্যে ২০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
  • ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত