কেউ তালিকা ধরে কিনছেন বই, কেউ এসেছেন ঘুরতে
Published: 19th, February 2025 GMT
দেখতে দেখতে ১৮তম দিন পার করে ফেলল বাঙালির প্রাণের মেলাখ্যাত অমর একুশে বইমেলা। ধীরে ধীরে বাড়ছে বইয়ের বিক্রি। অনেকেই এখন আগে সংগ্রহ করা তালিকা দেখে বই কিনতে শুরু করেছেন। আবার অনেকে এখনও বিভিন্ন স্টল থেকে বইয়ের তালিকা নিচ্ছেন। মেলার শেষ দিকে তারা পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়েছেন।
মেলায় ক্রেতা ও পাঠকের পাশাপাশি দর্শনার্থীর সংখ্যাও কম নয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মেলার কালীমন্দির প্রবেশ গেটে বেশ ভিড় দেখা গেল। ওই প্রবেশ গেটের পাশেই শিশু চত্বর। কর্মদিবসে শিশু চত্বরে ছুটির দিনগুলোর মতো ভিড় তেমন নেই। স্টলগুলোতে বেশ কিছু শিশুকে দেখা গেল বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বই কিনতে। বিভিন্ন কার্টুনের কাটআউটের সঙ্গে ছবি তোলার আবদার তো ছিলই।
শিশু চত্বর পার হয়ে সামনে হেঁটে যেতে যেতে চোখে পড়বে অক্ষর, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সসহ বিভিন্ন স্টল। বিশেষত পাঞ্জেরীতে কমিকস পাওয়া যাওয়ায় সেখানে কিশোর ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ওই স্টলে কমিকস কিনতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী মো.
অন্যদিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন স্টলের সামনে বৃহৎ আকৃতির স্ক্রিনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয়। বেঞ্চে বসে সেগুলো দেখছিলেন আতিউর নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, মেলায় ঘুরতে এসেছি। এখন বিশ্রামের ফাঁকে গত বছরের জুলাইয়ের ঘটনাগুলো দেখছি।
এর পরই পুঁথিনিলয়, গতিধারা, ঐতিহ্য, বাতিঘর, অন্যপ্রকাশসহ নামকরা স্টলগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। পাঠক ও দর্শনার্থীদের কেউ কেউ ছবি তুলছেন। আবার কাউকে দেখা যায় তালিকা করে আনা বই খুঁজতে। অন্যপ্রকাশের সামনে কথা হয় উত্তরা থেকে আসা গৃহিণী হাসনা ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আসলে একটি চিন্তিত সময় পার করছি। তাই বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু না এসেও থাকতে পারলাম না। প্রতি বছর হুমায়ূন আহমেদের বই কিনি আমি।
একে একে কবি প্রকাশনী, ছাপাখানা কিংবা বিদ্যাপ্রকাশের সাদাকালো স্টলগুলোর সামনে দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষ ছবি তুলছে। শুধু ছবি তুলে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তরুণী শিপলু বলেন, আমার প্রথমবার মেলায় আসা। তাই ছবি তুলে স্মৃতি রাখছি।
মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের চিত্র একটু ভিন্ন। সেখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চেয়ে ভিড় তুলনামূলক কম। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যে দর্শক ও পাঠকরা এসেছেন, তাদের অনেকেই জানান, মূলত একাডেমির ঐতিহ্য, বর্ধমান হাউস এবং বইমেলার প্রথম প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখতেই এসেছেন। বর্ধমান হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়ের ছবি তুলছিলেন বাবা জসিম আলম। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় আসি প্রতি বছর। বাংলা একাডেমিতে আসি নিজের ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে।
রাত পৌনে ৮টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি। এ সময় তড়িঘড়ি করে প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের ভেজা থেকে রক্ষা করতে বই গোছাতে দেখা যায়। মিনিট ১৫ স্থায়ী হওয়া বৃষ্টিতে তেমন কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সূচীপত্র প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সাঈদ বারী বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে মেলার সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। যদিও আমরা চেষ্টা করি স্টলের ওপর পলিথিনসহ অনেক কিছু দিয়ে সুরক্ষিত করতে; কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয় না। প্রকৃতির ওপর কিইবা করতে পারি।
এদিকে গতকাল মেলার ১৮তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৯টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– প্রতিভা প্রকাশ থেকে আকাশ মণির ‘স্বপ্ন ভাঙার শব্দ হয় না’, অমরাবতী থেকে হোসনেয়ারা বেগমের ‘জাগো জাগো শিশুদল’, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে মোহাম্মদ মোশতাক চৌধুরীর ‘সিলেটি কথ্যভাষার অভিধান’, চারু সাহিত্যাঙ্গন থেকে ইসা নিজামের ‘সোনালী সম্ভার’, কবিতাচর্চা থেকে আব্দুস সালাম মণ্ডলের ‘মানুষ প্রয়োজন’।
এ দিন মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বেলাশেষের শহীদ কাদরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারানা নূপুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামস আল মমীন এবং আহমাদ মাযহার। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি হাসান হাফিজ এবং গবেষক খান মাহবুব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ফজলুল হক এবং আশিকুল কাদির। সংগীত পরিবেশন করেন নওশিন তাবাসসুম স্মরণ, মমিনুল ইসলাম, মনিরুল ইসলামসহ অনেকেই।
আজ বুধবার বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবর্ষ: রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল অন ষ ঠ ন এক ড ম র স মন বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট