খোলা চোখে ব্যাপারটাতে বিশেষ কিছু নেই। করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে উড়ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর পতাকা। সাধারণত, যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে আয়োজক দেশে এমনটা স্বাভাবিক দৃশ্য।

তবে আজ করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আট দলের পতাকার মধ্যে ভারতের পতাকার উপস্থিতি বিশেষ ঘটনা। ভারত ক্রিকেট দল পাকিস্তানে যাচ্ছে না বলে দেশটিতে ভারতের পতাকা রাখা হয়নি বা হচ্ছে না—এমন একটি বিতর্ক যে বেশ আলোড়ন তুলেছে সম্প্রতি।

দুই দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ভিডিওতে দেখা যায়, লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম ও করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অন্য সব দেশের পতাকা থাকলেও ভারতের তেরঙা নেই। এ নিয়ে ভারতীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কথা বলেন ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজীব শুক্লাও। অবশেষে আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর দিন করাচিতে ভারতের পতাকা দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পাকিস্তানের সাংবাদিক ফরিদ খান একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কী চমৎকার এক মুহূর্ত।’ সেই পোস্টে পাকিস্তানিদের ‘বড় মনের মনুষ’ উল্লেখ করে ফরিদ লিখেছেন, সাত ভারতীয় সাংবাদিককে ভিসা দেওয়া হয়েছে।

করাচিতে অন্যান্য পতাকার সঙ্গে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা থাকার ভিডিও ও ছবি পোস্ট করেছেন আরও অনেকেই। এর আগে মঙ্গলবার পিসিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে আইএএনএসকে বলেছিলেন, আইসিসির নির্দেশনা অনুসারে স্টেডিয়ামে শুধু আইসিসি ও আয়োজক পিসিবি এবং ম্যাচের দুই দলের পতাকা উত্তোলন করার নিয়ম আছে। ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য পাকিস্তানে না যাওয়ায় দেশটির পতাকাও রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে বিসিসিআইয়ের অবস্থান জানতে লাইভমিন্ট থেকে ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লাকে জিজ্ঞেস করা হয়। মঙ্গলবার দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে ভারতের পতাকা সেখানে আছে কি নেই। যদি না থাকে, তাহলে অবশ্যই থাকা উচিত। অংশগ্রহণকারী সব দেশের পতাকাই সেখানে থাকা উচিত।’

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান হলেও ভারতের সব ম্যাচ হবে দুবাইয়ে। ভারতের কারণেই বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান নিজেদের গ্রুপপর্বের একটি করে ম্যাচ সেখানে খেলবে। একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনালও হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আগামীকাল ভারত তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর রোহিত শর্মারা দুবাইয়ে থেকে গেলেও বাংলাদেশ দল পরের ম্যাচের জন্য পাকিস্তানে চলে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা

চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।

জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।

কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।

জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।

চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
  • বুয়েটের নতুন রিকশার অনুমোদন দেবে সরকার, ‘মাস্টার ট্রেইনার’ হবেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা