বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সনদ সত্যায়ন আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইউজিসিতে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এ চুক্তি সই হয়।

এর মাধ্যমে মাইগভ প্ল্যাটফর্মে সনদ সত্যায়নের আবেদনে ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে ‘একপে’ ব্যবহার করে ইউজিসির আওতাধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা সেবার ফি প্রদান করতে পারবেন। এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক মো.

মামুনুর রশীদ ভূঞা, ইউজিসির সচিব মো. ফখরুল ইসলাম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার ও কল্যাণ) শাহ্ মোহাম্মদ তানভির মনসুর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

আরও পড়ুনএইচএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ, শুরু ২৬ জুন৪ ঘণ্টা আগে

এ সময় ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক সাইদুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কমিশনের ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন ও ট্রেনিং বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদার, যুগ্ম সচিব তাহমিনা রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মো. গোলাম মোস্তফাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতার আওতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এপোস্টিল সিস্টেম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিধি বা গাইডলাইন কিংবা নীতিমালা তৈরি করবে এবং সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করবে। ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এটি বাস্তবায়নে নির্দেশনা জারি করবে এবং সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার চার্জ পরিশোধে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে অবহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের প্রয়োজনীয় অ্যাকসেস সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরবরাহ করবে। দেশের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান নিজেদের বের করা, এ কাজে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার ও জনপ্রিয় করা এবং অনলাইন সনদ সত্যায়নের সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও তদারকি জোরদারে ইউজিসির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনমাধ্যমিকের সংশোধিত ছুটির তালিকা, এসএসসির প্রাক-নির্বাচনি ও নির্বাচনি পরীক্ষার নতুন তারিখ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের এপোস্টিল পদ্ধতিতে অনলাইনে সনদ সত্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এপোস্টিল পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট সত্যায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং তাঁদের ভোগান্তি কমবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এটুআই ও ইউজিসি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া বিদেশ গমন–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট এপোস্টিল মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সত্যায়ন সম্পন্ন করবে।

আরও পড়ুন২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সংশোধিত পাঠ্যসূচি, প্রশ্নের ধরন ও নম্বর বণ্টন প্রকাশ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অনুষ্ঠানে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সনদ সত্যায়নের ফি এখন থেকে একপে গেটওয়ের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন। অনলাইনে সনদ সত্যায়নের এই উদ্যোগ সফল বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন সনদ সত্যায়নের অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা খুবই কঠিন ছিল। এই প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য তিনি ইউজিসিকে ধন্যবাদ জানান। দেশের বাইরের দূতাবাসেও অনলাইন সনদ সত্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি

আরও পড়ুন২০২৭ সালের এসএসসির সিলেবাস প্রকাশ, নম্বর বিভাজন কীভাবে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউজ স র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি

‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’

কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।

হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’

অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’

একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’

খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ