ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুন হোসাইন হত্যার ঘটনায় কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া রাব্বানি হোসেন হৃদয় (২৫) ও মোহাম্মদ রাব্বিল (২৫) নামের দুই শুট্যার কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

গ্রেফতারকৃতরা উভয়েই মামুন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী। তাছাড়া ইতিপূর্বে  মামুন হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও  রাব্বিল ও হৃদয়ের নাম উঠে এসেছিলো বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নরসিংদি জেলার সদর থানার বাসাইলে অভিযান চালিয়ে তাদের কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদেরকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত মোঃ গোলাম রাব্বানি হোসেন হৃদয় ফতুল্লা থানার কুতুবআইল এলাকার আসিবের বাড়ীর ভাড়াটিয়া আলামিনের পুত্র  ও মোহাম্মদ রাব্বিল নারায়নগঞ্জ সদর থানার আমলাপাড়ার জালাল আহম্মেদের ভাড়াটিয়া ফেরদৌসের পুত্র।

 গ্রেফতারকৃতরা উভয়েই মামুন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী। পুলিশ জানায়, মামুন হত্যাকান্ডের পরপরই গ্রেফতারকৃত দুই শুট্যার সহ চারজন কক্সবাজারে চলে যায়।সেখান থেকে রাব্বিল ও হৃদয় বগুড়া, মানিকগঞ্জ, মাওয়া অতপর নরসিংদিতে অবস্থান নেয়।

বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নরসিংদিতে গ্রেফতারকৃত হৃদয়ের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসেবনরতবস্থায় তাদের কে গ্রেফতার করা হয়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতের বিষয়টি স্বীকার করেছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, মামুন হত্যা মামলায় বুধবার রাতে নরসিংদী থেকে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া হৃদয় ও রাব্বিল নামের এজাহারনামীয় দুই আসামী কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৫ জন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ইতিমধ্যে  মামুন হত্যা মামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবনাবন্দি প্রদানকরা তিন আসামীর জবানবন্দিতেও  হৃদয় এবং রাব্বিলের নাম উঠে এসেছে। তাদের কে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য যে  ৭ ফেব্রুয়ারী ভোর ৫ টার দিকে ফতুল্লা থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুন হোসাইনকে ফতুল্লার পূর্ব লালপুর রেললাইনস্থ বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

হত্যাকান্ডের একদিন পর নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে আওয়ামী ক্যাডার আক্তার ও সুমন সহ ১১ জনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

পুলিশ হত্যা মামলার তদন্তে নেমে সিসিফুটেজ পর্যাচালোনা করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আরিফুল ওরফ আরিফ,আরছ আলী ওরফে আরব আলী ও আজমির কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত এই তিনজন আসামীই পর্যাক্রমে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।

নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’

তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। 

এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার

গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।

ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ