প্রাক্‌–প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিতভাবে সাদরি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পাঠানোও হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সাদরিভাষী ক্ষুদ্র জাতিসত্তা–অধ্যুষিত অন্য জেলাগুলোতে। তবে এসব বই পড়তে পারছে না খোদ সাদরিভাষী শিশুরাও। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওঁরাও, মুন্ডা, রাজোয়ারসহ কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ এ সাদরি ভাষায় কথা বলে।

২০১৭ সালে প্রাক্‌–প্রাথমিক ও ২০১৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সাদরি ভাষায় বই প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এনসিটিবির দায়িত্ব পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পর্যন্ত। মাতৃভাষায় শিক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। মাতৃভাষায় সাদরিভাষী শিশুদের পড়ানো হচ্ছে না, এটা আমাদের জানা নেই।’

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহীর কল্যাণী মিনজি, নওগাঁর বঙ্গপাল সরদার ও সিরাজগঞ্জের যোগেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে। তাঁরা সাদরিভাষী শিশুদের পাঠ্যবই উন্নয়ন, অভিযোজন ও ভাষান্তরের সঙ্গে যুক্ত এবং ওঁরাও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তাঁদের মতে, বই প্রকাশের আগেই পরিকল্পনা করা উচিত যে এসব বই কীভাবে পড়ানো হবে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাদরিভাষী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে সাদরিভাষী খণ্ডকালীন শিক্ষক অথবা নিয়োগ করা বাঙালি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। কেননা বইগুলো বাংলা হরফেই লেখা হয়েছে।

বঙ্গপাল সরদারের দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নাচোল ও সদর উপজেলায় সাদরিভাষী ওঁরাও, মুন্ডা, মাহাতো, রাজোয়ারসহ অন্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রায় ১০০টি গ্রাম আছে। এসব গ্রামের শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাতৃভাষার অনেক শব্দ, সংস্কৃতি কিংবা পালাপার্বণ তাদের কাছে অজানা। ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। অথচ এ দেশে অন্য জাতিসত্তার মানুষদের ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা হবে না, এটা ভাবা যায় না।

সংশ্লিষ্ট শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাতৃভাষার অনেক শব্দ, সংস্কৃতি কিংবা পালাপার্বণ তাদের কাছে অজানা। ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। অথচ এ দেশে অন্য জাতিসত্তার মানুষদের ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা হবে না, এটা ভাবা যায় না। বঙ্গপাল সরদার, সাদরিভাষী শিশুদের পাঠ্যবই উন্নয়ন, অভিযোজন ও ভাষান্তর বিশেষজ্ঞ

গত বুধবার নাচোলের মুন্ডা ও ওঁরাও–অধ্যুষিত এলাকা ফুলকুঁড়ি গ্রামে ‘ফুলকুঁড়ি নবযুগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং বরেন্দা গ্রামের ‘বরেন্দা লালজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ গিয়ে দেখা যায়, এই দুই বিদ্যালয়ে সাদরি ভাষার কোনো বই আসেনি। কারণ জানতে চাইলে ফুলকুঁড়ি নবযুগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমি মোস্তারী বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা সাদরি ভাষার বইয়ের চাহিদা পাঠাতে নির্দেশ দেন। তবে এবার নির্দেশ পাননি। এ ছাড়া সাদরিভাষী শিশুরা ওই ভাষার বই পড়তে চায় না। তাই চাহিদা পাঠাননি, আর বইও আসেনি। অন্যদিকে বরেন্দা লালজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘শিশুরা আগ্রহ দেখায় না। তাই বইয়ের চাহিদা পাঠাইনি।’

তবে ভিন্ন কথা জানায় এসব বিদ্যালয়ের কয়েকজন সাদরিভাষী শিক্ষার্থী। তারা বলে, মাতৃভাষায় পড়ানো হলে তারা পড়তে চায়। এ ভাষায় যে বই আছে, তা–ই তারা জানে না। নাচোল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি সরকার বলেন, বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষকেরা এবার সাদরি ভাষার বইয়ের কোনো চাহিদা পাঠাননি। তাই এবার নাচোল উপজেলায় সাদরি ভাষার কোনো বই আসেনি।

অন্যদিকে গোমস্তাপুর উপজেলার দেওপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিদ্ধিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসনইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বিদ্যালয়ে সাদরি ভাষার বই এলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় পাঠদান করা হয় না। দেওপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজনি খাতুন আজ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার। তবে আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা কম। প্রশিক্ষণও নেই। তাই পড়ানো সম্ভব হবে কি না, বলা যাচ্ছে না।’

সাদরি ভাষায় বই ছাপানো এবং শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়া—মাতৃভাষায় শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করি। ধাপে ধাপেই কাজ এগোয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টি পরিকল্পনায় নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।মো.

জেছের আলী, জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

ওঁরাওদের সামাজিক সংগঠন দিঘরী পরিষদ গোমস্তাপুর উপজেলা শাখার রাজা জহরলাল এককা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবি সরকার ২০১৫ সালেই মেনে নেয়। কিন্তু আজও সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আসলে আমরা চরম অবহেলার শিকার।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.জেছের আলী জানান, ‘সাদরি ভাষায় বই ছাপানো এবং শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়া—মাতৃভাষায় শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করি। ধাপে ধাপেই কাজ এগোয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টি পরিকল্পনায় নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ ভ ষ র বই স দর ভ ষ য় স দর এসব ব সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য

থিসিস শিক্ষার্থীদের গবেষণা সহায়তার পাশাপাশি পিএইচডি গবেষকদের জন্যও অনুরূপ বৃত্তি চালুর ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।

রবিবার (২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের থিসিস শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা সহায়তা হিসেবে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

আরো পড়ুন:

সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন

ইবিতে কুরআন ও হিজাববিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একাডেমিক ও গবেষণামুখী শিক্ষার্থীদের জন্য শুভেচ্ছা ও দোয়ার নিদর্শনস্বরূপ কিছু করতে পারায় আমরা আনন্দিত। আমরা থিসিস শিক্ষার্থীদের গবেষণা সহায়তার পাশাপাশি খুব শিগগিরই পিএইচডি গবেষকদের জন্যও অনুরূপ বৃত্তি চালু করব।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক একাডেমিক পরিবেশ উন্নয়ন ও গবেষণার পরিধি বাড়াতে প্রশাসন অব্যাহতভাবে কাজ করছে। গবেষণার সুযোগ বাড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করবে।”

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, “গবেষণার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের থিসিসে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের অনুদান প্রদান একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। অনুদানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবে।”

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ রফিকুল ইসলাম।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের আওতায় প্রতিটি থিসিস শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ১২৪ টাকা করে অনুদান পাবেন। এ অর্থ শুধু গবেষণাসংক্রান্ত কাজে ব্যয়যোগ্য এবং ‘থিসিস শিক্ষার্থীদের বৃত্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অনুষ্ঠানে প্রতিটি অনুষদ থেকে দুজন করে শিক্ষার্থী উপাচার্যের কাছ থেকে চেক গ্রহণ করেন। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীরা আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে পরিচয়পত্র বা প্রবেশপত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে চেক সংগ্রহ করতে পারবেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রাধ্যক্ষ এবং বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ