মারধর করে সাগরে ফেলে দেওয়া জেলের মরদেহ উদ্ধার
Published: 21st, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার উপকূলে বালু তোলার প্রতিবাদ করায় মারধর করে সাগরে ফেলে দেওয়ার পাঁচ দিন পর রাম দাস নামে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে সীতাকুণ্ড সমুদ্র এলাকা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্ব জোন (চট্টগ্রাম) কোস্টগার্ডের কুমিরা ক্যাম্পের কমান্ডার শওকত আকবর। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালী সি বিচ-সংলগ্ন সমুদ্র এলাকা থেকে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপকূলে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিবাদ করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাম দাসকে মারধর করে সাগরে ফেলে দেয় বালুদস্যুরা। এ সময় তাঁর ভাই লিটন দাসকে অপহরণ করে তারা। খবর পেয়ে আট ঘণ্টা পর নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকা থেকে লিটন দাসকে উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে নৌ-পুলিশ।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ৫টি স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বালু উত্তোলন করলেও গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিএনপি-জামায়াত নেতারা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সাগর থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের কবলে পড়ছে বেড়িবাঁধ। ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা ও তা পরিবহনে বাল্কহেডের চলাচলের কারণে আশপাশের এলাকায় জেলেদের জালে তেমন মাছও পড়ছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুরের গুলিয়াখালী, বাড়বকুণ্ডের মাদারীতোলা, বাঁশবাড়িয়ার আকিলপুর, সোনাইছড়ি, কুমিরাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার সন্দ্বীপ চ্যানেলে রাত-দিন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। গত কয়েক মাস যাবত টানা বালু উত্তোলন করা হলেও নীরব ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জেলেপাড়ার সর্দার প্রদীপ দাস বলেন, চার মাস ধরে সাগর উপকূলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বেপরোয়াভাবে বালু তোলার ফলে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাগরে বসানো জেলেদের জালগুলো তারা কেটে নিয়ে গেছে। দাদনদারদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কেনা এসব জাল হারিয়ে পথে বসেছেন জেলেরা। হামলার শিকার হওয়া দুই জেলে সহোদরের দেড় লক্ষাধিক টাকার জাল কেটে দিয়েছে এসব বালুখেকো দুর্বৃত্তরা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ড উপকূলে সাগর থেকে বালু তোলা হচ্ছে। উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন তিনি। কিন্তু বালু তোলা বন্ধ হয়নি।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাল্কহেড ও ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রুজু হয়েছে জানিয়ে কুমিরা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ ওয়ালি উদ্দীন আকবর বলেন, এনভি নাবিল ফারহান নামক একটি বাল্কহেডের লোকজন জেলে লিটন দাসকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিল। এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। অপর জেলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে দুই যুবককে অপহরণের ঘটনায় ৩ অপহরণকারী গ্রেপ্তার
বন্দরে দুই যুবককে অপহরণের পর ২ লাখ টাকা মুক্তি পণ দাবির ঘটনায় ৩ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার (১১ জুন) রাতে বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের লাউসার গ্রামে অপহরণের এ ঘটনাটি ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বন্দরের মদনপুর দেওয়ানবাগ এলাকার হাজী শহিদুল ইসলামের ছেলে মাহবুবুর রহমান শিশির (৩৫), বন্দরের নেহাল সরদারেরবাগ গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া(২৯) ও সোনারগাঁ উপজেলার নাজিরপুর বড়বাড়ি গ্রামের মৃত নান্নু মিয়ার ছেলে মোঃ সুমন (২৮)।
এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের পশ্চিম কেওঢালা এলাকার ফয়েজ আহমেদের ছেলে রনি( ৪০), বাবুল (৪৮) ও অপুসহ ১০-১২ জন অপহরণকারী। এ ব্যাপারে অপহরণের শিকার ফাহিমের (১৭) এর মামা হৃদয় হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বন্দর থানায় মামলা করেছেন।
মামলার বাদী হৃদয় হোসেন জানান, ভাগ্নে ফাহিম ও তার বন্ধু মোহন মিয়া বুধবার রাত নয়টার দিকে তাদের আরেক বন্ধু অপুর সাথে দেখা করতে বন্দরের লাউসার এলাকার জনৈক জাহাঙ্গীর মিয়ার বাড়িতে যায়। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপহরণকারীরা দুজনকে একটি কক্ষে আটকে রাখে।
তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধর করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণের বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানতে পেরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ তে কল করে পুলিশকে জানান। পরে বন্দর থানা পুলিশ ফাহিম ও মোহনকে উদ্ধার করে এবং তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, অপহরণ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।