ইসলামের গণজোয়ার ঠেকাতে স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে: চরমোনাই পীর
Published: 21st, February 2025 GMT
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, ‘ইসলাম বিজয়ী হওয়া এখন এ দেশের গণমানুষের জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবে ইসলামের গণজোয়ার ঠেকাতে একটা স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, রাষ্ট্রে ইসলাম বিজয়ী হলে সর্বস্তরের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সবাই যার যার অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবেন। সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
আজ শুক্রবার সকালে চরমোনাই দরবার শরিফের তিন দিনব্যাপী মাহফিলের শেষ দিনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর এ কথাগুলো বলেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, দেশের মানুষ স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থেকে ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্বাধীনতা লাভের পর ৫৪ বছরে দেশের মানুষ সব রাজনৈতিক দলের শাসন দেখেছে। কিন্তু কোনো শাসনব্যবস্থা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। হানাহানি, লুটপাট, দুর্নীতি, জুলুম বন্ধ করতে পারেনি। তাই দেশের মানুষ বুঝে গেছে, ইসলামি দলগুলোর শাসন ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির আরও বলেন, ‘বস্তুবাদী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। এসব ছাত্রসংগঠনের প্রতি এখন দেশের শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতার আস্থা নেই। বিপরীতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নিরলসভাবে আদর্শিক জনশক্তি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের স্লোগান হলো “সাহাবাদের অনুসরণ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন”। তাই সাহাবাদের চরিত্রে মানবজীবন গঠনের লক্ষ্যে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যেভাবে স্বৈরাচার পতনের জন্য কাজ করা হয়েছে, সেভাবেই দেশ গঠনের জন্য ছাত্রসমাজকে প্রস্তুতি নিতে হবে, কাজ করে যেতে হবে।’
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুরের সভাপতিত্বে গণজমায়েতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদ। তিনি বলেন, অন্যান্য সংগঠনে নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা নির্ধারিত হয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম, কেন্দ্র দখল, চাঁদাবাজি ও মাদকের সাম্রাজ্য গঠনের ওপর। কিন্তু ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও সৎকর্ম যাচাই করে থাকে। তারা আদর্শিক নৈতিক শিক্ষা ও সমাজসেবা এবং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করছে। দেশের মানুষের যেকোনো দুর্যোগে ত্রাতা হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করছে।
গণজমায়েতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি দেলোয়ার সাকি, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক লোকমান হোসাইন জাফরী, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেত পার্টির সামেত সামি তেমেল, ইন্দোনেশিয়ার হেড অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অব ইসলামিক উম্মাহ ইউনিয়ন আদেহ নুয়ানসা ইউবিসোনু ও মিসরের আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমাদ সিদকী উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল শনিবার সকাল আটটায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে তিন দিনের মাহফিল শেষ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চরম ন ই ক জ কর গঠন র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।