জান্নাতে কার পায়ের শব্দ শুনেছিলেন রাসুল (সা.)
Published: 23rd, February 2025 GMT
মেরাজের রাতে রাসুল (সা.) জান্নাত পরিদর্শনের সময় হজরত বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.)–র পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে রাসুল (সা.) হজরত বেলাল (রা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে বেলাল, ইসলাম গ্রহণের পর তুমি কী এমন কাজ করেছিলে, যে কারণে তুমি জান্নাতে পৌঁছে গেলে? গতরাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম!’
হজরত বেলাল (রা.
কৃষ্ণাঙ্গ সাহাবি হজরত বেলাল (রা.)–র জন্ম মক্কায়। তবে তিনি ছিলেন আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) বংশোদ্ভূত। মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশ নেতা উমাইয়া ইবনে খালফের ক্রীতদাস ছিলেন তিনি। কুরাইশদের চোখে ক্রীতদাস হিসেবে বেলালের (রা.) ইসলাম গ্রহণ ছিল চরম ধৃষ্টতা। তাঁদের শত বছরের বিশ্বাস, চিন্তা ও আভিজাত্যের প্রতি প্রচণ্ড আঘাত হানে।
হজরত বেলাল (রা.)–এর মনিব উমাইয়া তাঁর ইসলাম গ্রহণের কথা জানতে পেরে তাঁকে ইসলাম ত্যাগের জন্য জবরদস্তি করতে থাকেন। তাতে বিফল হওয়ায় উমাইয়ার নির্দেশে বেলাল (রা.)–এর ওপর শুরু হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। কখনো মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে, কখনো তপ্ত অঙ্গারের ওপর তাঁকে শুইয়ে রাখা হতো, নৃশংসভাবে গলায় উত্তপ্ত রশি বেঁধে ছাগলের মতো তাঁকে মক্কার অলিতে-গলিতে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। কখনো বুকের ওপর ভারি পাথর রেখে দেওয়া হতো। রুদ্ধ হয়ে আসত তাঁর নিশ্বাস।
আরও পড়ুনহজরত আলী (রা.)–র সাহসে এসে মিশেছে পাণ্ডিত্ব০৭ মে ২০২৩এত নির্যাতনের মধ্যেও হজরত বেলাল (রা.) শুধু আহাদ, আহাদ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) বলে চিৎকার করতেন। একদিন বাতহা উপত্যকায় বেলাল (রা.)–এর অত্যাচার চলছিল। আবু বকর (রা.) যাচ্ছিলেন সে পথ ধরে। ঘটনা দেখে তিনি ভীষণ মর্মাহত হলেন। মোটা অঙ্কের অর্থ উমাইয়াকে দিয়ে বেলাল (রা.)-কে তিনি তাঁর কাছ থেকে কিনে নিলেন। বেলাল (রা.) মুক্তি পেলেন দাসের জীবন থেকে।
আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) ছিলেন সুশিক্ষিত সাহাবি০৩ মে ২০২৩বদর, উহুদ, খন্দক যুদ্ধসহ সব সামরিক অভিযানেই হজরত বেলাল (রা.) অংশ নিয়েছিলেন। বদর যুদ্ধের ময়দানে কুরাইশদের পক্ষে ছিলেন হজরত বেলাল (রা.)–এর একসময়ের মনিব অত্যাচারী অবিশ্বাসী উমাইয়া ইবনে খালফ। সে যুদ্ধে বেলাল (রা.)–এর তরবারির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এভাবে এক সময়কার ক্রীতদাস বেলাল (রা.)–এর হাতে প্রাণ হারান তাঁর পুরোনো নির্যাতনকারী মনিব।
আরও পড়ুনঋণ থেকে মুক্তির জন্য যে আমল করবেন০৩ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হজরত ব ল ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দোয়ার ফজিলত ও আদব
দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)
আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)
মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)
‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)
নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। ‘পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)
দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।
হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]