অস্ট্রেলিয়ার বদলে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, ব্যাখ্যা চাইলো পিসিবি
Published: 23rd, February 2025 GMT
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যাত্রা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাচের আগে একটি বিতর্কিত ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত বাজানোর পরিবর্তে ভুল করে ভারতের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়, যা নিয়ে আইসিসির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে ইংল্যান্ডের জাতীয় সংগীত সঠিকভাবে বাজানো হলেও, এরপর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের বদলে বাজতে শুরু করে ভারতের জাতীয় সংগীত। উপস্থিত দর্শক-সমর্থকরা এতে বিস্মিত হন, এবং মুহূর্তের মধ্যেই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আয়োজকদের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পিসিবি এই ভুলের ব্যাখ্যা চেয়ে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের মতে, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সংগীত বাজানোর দায়িত্ব আইসিসির হাতে থাকায় এই ভুলের দায়ও তাদেরই নিতে হবে। বিশেষ করে, যেখানে ভারত পাকিস্তানে খেলছেই না, সেখানে তাদের জাতীয় সংগীত বাজানো হলো কীভাবে?”
যদিও কিছুক্ষণ পর সংশোধন করে অস্ট্রেলিয়ার সঠিক জাতীয় সংগীত বাজানো হয়, তবে ততক্ষণে বিতর্ক তৈরি হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়োজকদের কড়া সমালোচনা চলছে, যদিও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকে এই ঘটনার জন্য সরাসরি পিসিবিকে দায়ী করছেন না।
এ নিয়ে দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার আইসিসির কাছে ব্যাখ্যা চাইলো পিসিবি। এর আগে দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের সম্প্রচার ক্রিনের এক কোনায় টুর্নামেন্টের লোগো থেকে পাকিস্তানের নাম সরিয়ে ফেলায় ব্যাখ্যা চেয়েছিল সংস্থাটি। পিসিবি মনে করছে, এই ভুলের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বাগতিক দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে ছোট করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইস স র
এছাড়াও পড়ুন:
চামড়া সংরক্ষণে কাজে আসেনি ২০ কোটি টাকার ‘গছানো’ লবণ
পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া পায় মূলত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো। কিন্তু প্রতিবছর চামড়ার দর কমছে। প্রাথমিক সংগ্রহকারীরাও চামড়া সংরক্ষণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই এবার সরকার চামড়া সংরক্ষণ করার জন্য এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানকে লবণ দিয়েছিল; কিন্তু এসব লবণ তেমন কাজে আসেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০ কোটি ব্যয়ে ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ কিনে ৬৪ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠানকে লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। লবণ নিয়ে বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। আবার তালিকায় নাম থাকলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের লবণ না পাওয়ার অভিযোগও আছে।
আমরা আড়াই মণ লবণ পেয়েছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে চামড়া সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। যারা চামড়া নিয়েছে, তাদের চামড়ার সঙ্গে লবণও দিয়ে দিয়েছিচট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আবু বকর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইউছুপগত ২৭ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে লবণ কেনার জন্য বরাদ্দের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষককে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তালিকা অনুযায়ী লবণ মিলমালিকদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসকেরা লবণ সংগ্রহ করেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আবু বকর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইউছুপ বলেন, তাঁরা এবার চামড়া সংগ্রহ করেছেন ৪৭৯টি। ঈদের দিন বিকেলে সংগ্রহ শেষে রাতেই আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আড়াই মণ লবণ পেয়েছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে চামড়া সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। যারা চামড়া নিয়েছে, তাদের চামড়ার সঙ্গে লবণও দিয়ে দিয়েছি।’
যাদের লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি বলে জানিয়েছে। তারা সেসব লবণ পাশের মাদ্রাসায় যেখানে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, সেখানে হস্তান্তর করে।জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামসংরক্ষণ না করলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে লবণ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এতিমখানা কমদমোবারকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজন না থাকলেও লবণ নিতে বলা হয়েছিল। আমাদের যেহেতু দরকার হবে না, তাই আমরা নিইনি।’
চট্টগ্রামে ৯৮ লাখ ৪২ হাজার টাকায় ৬৪০ টন লবণ দেওয়া হয়। জোর করে লবণ বরাদ্দের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি বলে জানিয়েছে। তারা সেসব লবণ পাশের মাদ্রাসায় যেখানে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, সেখানে হস্তান্তর করে।’
খাগড়াছড়িতে বরাদ্দ লবণ দেওয়া হয়েছে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে। জেলার জব্বারিয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় চার টন লবণ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু আমরা চামড়া সংরক্ষণ করিনি।’
এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ভিত্তিতে লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু আসছে তাহলে বিষয়টি রিভিউ (পর্যালোচনা) করতে হবে।’
ফেনীতে লবণ পেয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। অনেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নেয়নি। লবণ নিয়েছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ না করেই বিক্রি করেছে। চামড়া সংরক্ষণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।চামড়া সংরক্ষণ খুবই কমফেনীতে লবণ পেয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। অনেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নেয়নি। লবণ নিয়েছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ না করেই বিক্রি করেছে। চামড়া সংরক্ষণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।
ফেনীর দাগনভূঞার তালতলী কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম কামরুল আহসান বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৬২ বস্তা লবণ তাঁদের জোর করে দেওয়া হয়। কিন্তু চামড়া সংরক্ষণ না করেই তাঁরা বিক্রি করেন। প্রতিটি লবণের বস্তা বিক্রি করেন ৩০০ টাকা দরে।
ফুলগাজীর নুরপুর দারুল উলুম মহিউসুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষা পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁদের লবণ নিতে বলা হলেও চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা নেননি।
তবে প্রয়োজন থাকলেও লবণ পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ফেনী সদরের শর্শদি দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, তাঁরা এবার এক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তাঁদের লবণ দেওয়া হয়নি। কেউ এ বিষয়ে যোগাযোগও করেনি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া সংরক্ষণ করার উদ্দেশেই লবণ দিয়েছে সরকার। তবে লবণ নিয়েও কারও কারও চামড়া সংরক্ষণ না করার বিষয়ে শুনেছেন। লবণ না পেলেও তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ও সংবাদদাতা, ফেনী]