প্রতারণার মামলা থেকে খালাস পেলেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল
Published: 23rd, February 2025 GMT
প্রতারণার মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন চিত্রনায়ক এম এ জলিলসহ (অনন্ত জলিল) ছয়জন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্লাহ আজ রোববার এ আদেশ দেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী পারভেজ হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রতারণার অভিযোগে অনন্ত জলিলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী শাহনাওয়াজ চৌধুরী লিখিতভাবে মামলা প্রত্যাহারের আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। তাতে বলা হয়, মামলার অভিযোগের বিষয়ে অন্তত জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে তাঁর (বাদী) আপস হয়েছে। এ জন্য তিনি মামলা প্রত্যাহার চান। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেন। এর ফলে মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন অনন্ত জলিলসহ ছয়জন।
খালাস পাওয়া অন্য পাঁচজন হলেন পোলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহানারা বেগম, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (ফাইন্যান্স) শরীফ হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার মিলন ও বাজেট অ্যান্ড অডিট ডিপার্টমেন্টের হেড অব কস্ট সাইদুল ইসলাম।
পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার পরও টাকা বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর অনন্ত জলিলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন শাহনাওয়াজ চৌধুরী। মামলায় শাহনাওয়াজ দাবি করেন, তিনি মেসার্স স্টিচ অ্যান্ড কালার টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁর প্রতিষ্ঠান উন্নত মেশিনারিজের মাধ্যমে এমব্রয়ডারি ও জামাকাপড় প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করে। অনন্ত জলিলের প্রতিষ্ঠান ওই প্রতিষ্ঠানকে ৯৮ হাজার ৬১০টি শার্টের কাটিং পার্ট রং করার কার্যাদেশ দেয়। পুরো কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পরও অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
প্রতারণার মামলায় পোলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান অনন্ত জলিলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদীর প্রতিষ্ঠান অনন্ত জলিলের প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের জন্য বারবার চিঠি দেয়। পরে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু অনন্ত জলিলের প্রতিষ্ঠান এর কোনো জবাব দেয়নি। এমনকি বাদীর প্রতিষ্ঠানের পাওনা ২৯ হাজার ২৯৯ ডলার পরিশোধ করেনি।
আরও পড়ুনপ্রতারণার মামলা: অনন্ত জলিলকে আদালতে হাজির হতে সমন৩০ ডিসেম্বর ২০২৪অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তখন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানকে পোশাকের এই কাজটি দিয়েছিল সিল্ক রুট সোর্সিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পুরো কাজ শেষ হলে পণ্যগুলো তাদের নেওয়ার কথা। ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই কাপড় রং করার জন্য মেসার্স স্টিচ অ্যান্ড কালার টেকনোলজিকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সিল্ক রুট সোর্সিং প্রতিষ্ঠানটি তার ফরমাশ দেওয়া সব মাল এখনো নেয়নি। সে কারণে বিল না পাওয়ায় তাঁরা মেসার্স স্টিচ অ্যান্ড কালার টেকনোলজির পাওনা পরিশোধ করতে পারেননি। বিল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অর্থ পরিশোধ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত
আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫
আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।
তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।
ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল