জামায়াত আমিরের স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার কর্মসূচি স্থগিত
Published: 24th, February 2025 GMT
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে নিজের স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হওয়ার কর্মসূচি স্থগিত করেছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থানের কর্মসূচিও স্থগিত করেছে জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে দলটির ২ ঘণ্টার কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।
সোমবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুরোধে জামায়াত আমির ডা.
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারকে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রায় পুনর্বিবেচনায় রিভিউ করেছেন এটিএম আজহার। মঙ্গলবার এর শুনানি হতে পারে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বিচার চলাচলে অথবা রায় ঘোষণার পর কারাগারে মারা গেছেন আরও পাঁচ জন। দণ্ডিত নেতাদের মধ্যে একমাত্র এটিএম আজাহার জীবিত। জামায়াত বারবার অভিযোগ করেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ মিথ্যা মামলায় ও সাজানো সাক্ষীতে নেতাদের সাজা দিয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্যান্য মামলায় জামায়াতের সব নেতা ছাড়া পেয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা স্পর্শকাতর হওয়ায় জামায়াতও এতদিন এটিএম আজাহারের মুক্তির কথা বলেনি। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জামায়াত।
২০ ফেব্রুয়ারি জামায়াত আমির ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, এটিএম আজহারকে মুক্তি না দিলে তিনিও কারাগারে যেতে চান। স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হতে ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে যাবেন। পরে কয়েকদিন তিনি বক্তৃতায় বলেছেন, এটিএম আজহারকে কারাগারে রেখে মুক্ত থাকতে চান না তিনি। জামায়াতের কর্মী সমর্থকরাও কারাগারে যেতে প্রস্তুত।
জামায়াত সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, রিভিউ শুনানির দিন নির্ধারণ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারিকে সরকার শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য ত র আম র র কর ম অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।