আনন্দধাম কাব্যগ্রন্থ সম্মাননা পেলেন এনামুল হক প্রিন্স
Published: 24th, February 2025 GMT
আনন্দধাম শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বাংলা সাহিত্য অবদানের জন্য আনন্দধাম কাব্যগ্রন্থ সম্মাননা ২০২৫ প্রদান করা হয়। রোববার ইডেন থাই এন্ড চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, চাষাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়।
আনন্দধামের নির্বাহী চেয়ারম্যান হাসিনা রহমান সিমু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান তানভির হায়দার খান, প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য রাখেন কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, গীতিকার আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক দর্পন কবীর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্দধামের অতিরিক্ত চেয়ারম্যান শাহরিয়ার মোঃ মারুফ, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আনন্দধাম সংগঠনের অতিরিক্ত ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মুক্তি, শ্যামল দত্ত, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল কাইয়ুম আল আমিন, অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিরি আহ্বায়ক খোকন গাজী, মোঃ শাহ আলম। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালকবৃন্দের মধ্যে আব্দুর রহমান বাচ্চু, অমর মন্ডল, এস এম ইলিয়াস মামুন, মোঃ মুজাহিদ, জাহাঙ্গীর ডালিম, আশরাফুল রোমান, রিহান, টুলি পাঠান, কাব্যছন্দ সাহিত্য ও সংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি কবি ও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম আরজু, মুক্ত আওয়াজ নিউজ এক্সপ্রেস ফটো সাংবাদিক মাহাবুব আল ইসলাম সাদমান প্রমুখ।
রাত নয়টায় অমর একুশে বইমেলায় লেখক এ এস এম এনামুল হক প্রিন্সের কাব্যগ্রন্থ “জোছনা ছুঁয়ে যায়” বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য “আনন্দধাম কাব্যগ্রন্থ সাহিত্য সম্মাননা ২০২৫” সংগঠনের নির্বাহী চেয়ারম্যান হাসিনা রহমান সিমু সহ অতিথি ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ক্রেষ্ট, ফুলের তোড়া, উত্তরীয়, সনদপত্র, ক্রোড়পত্র প্রদান করেন।
ইডেন থাই চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে সন্ধ্যা সাতটায় শব্দশৈলী ও কলকন্ঠ সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি মোঃ মামুন হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হাসিনা অটিজম চাইল্ড কেয়ারের অধ্যক্ষ ও আনন্দধামের নির্বাহী চেয়ারম্যান হাসিনা রহমান সিমু “জোছনা ছুঁয়ে যায়” কাব্যগ্রন্থের জন্য, কলকন্ঠ কাব্যগ্রন্থ সাহিত্য সম্মাননা ২০২৫ ও শব্দশৈলী সাহিত্য সম্মননা ২০২৫ “এ এস এম এনামুল হক প্রিন্স”কে ক্রেষ্ট, সনদপত্র ও ফুলের তোড়া তুলে দেন।
এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কবি, সাংবাদিক, সংগঠক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সহ নানা পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স গঠন র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫