গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের পৌরপার্কের শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কর্মসূচি ঘোষণা করে গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।

দুপুরে কলেজ মাঠে আন্দোলনকারীরা জানান, আজ বেলা ১টা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে, না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ মিয়া, সদস্যসচিব বায়েজিদ বোস্তামী, মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা, মুখপাত্র জাহিদ হাসান, যুগ্ম আহবায়ক আতিক শাহরিয়ার, যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান, সংগঠক অতনু সাহা, ফুয়াদ খান, মেহেজাবিন জীম, সৌরভ হাসান, নাগরিক কমিটি গাইবান্ধা সদর ও সাদুল্লাপুর উপজেলার সংগঠক রাশেদুল ইসলাম এবং এ আর আতিক প্রমুখ।

এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কলেজটির শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
গাইবান্ধা শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে মাসব্যাপী আয়োজিত বাণিজ্য মেলার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। এদিন রাত ১০টার কিছু আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির নেতা শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং শেফাউর রহমান মেলায় বেড়াতে যান। এ সময় একটি দোকানে এক নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছিল। এতে শরিফুল ইসলামসহ ছাত্রনেতারা বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব শেফাউর রহমান আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে আহত শরিফুল ও শেফাউর এখনো চিকিৎসাধীন আছেন। মেহেদি হাসানকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল রাত ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর থানা কার্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতা–কর্মী। তাঁরা থানার সামনে বসে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ ঘটনায় গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্যসচিব মো.

আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে রাতেই গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা করেন। আসামির হিসেবে ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৯ থেকে ১০ জনকে।

আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম তালুকদার বলেন, গতকাল রাতেই মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সুমন, কিরণ ও নাজমুল নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ