শেফদের জন্য বিভিন্ন চাকরি ও শেফ হতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের তথ্য নিয়ে ‘হসপিটালিটি অ্যান্ড শেফ জব ফেয়ার’ নামে চাকরি মেলার আয়োজন করেছে অনলাইনে চাকরি খোঁজার প্রতিষ্ঠান ‘বিডিজবস’। সদ্য প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রার্থী ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ রয়েছে মেলায়। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বিডিজবস ডটকম লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক এবং শেফ জব ফেয়ারের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, মেলায় আসার জন্য প্রায় ১৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী নিবন্ধন করেছেন। শেফদের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও শেফ হতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলায় মোট ৬০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। যেহেতু শেফদের দেশের বাইরে প্রচুর চাহিদা রয়েছে, তাই কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠানও মেলায় রয়েছে।

শুধু শেফ পদে নয়, রুম অ্যাটেনডেন্ট, অতিথি ব্যবস্থাপনা, অ্যাসিসটেন্ট টেকনিশিয়ান ও টিম মেম্বার পদে চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া প্রফেশনাল শেফ কোর্সে ভর্তির জন্য প্রার্থী নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

দেশ-বিদেশের হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড শপ, বেকারির জন্য বিভিন্ন কোর্সের তথ্য নিয়ে স্টল দিয়েছে ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। শেফের কাজ, টেবিল সেট-আপ, খাদ্য ও পানীয় পরিবেশনের কলাকৌশল প্রশিক্ষণ, পেস্ট্রি, ব্রেড, কুকিজ তৈরির প্রশিক্ষণ ফ্রন্ট অফিস ও অভ্যর্থনার কার্যাবলি এবং হাউসকিপিংসহ ১১টি কোর্স রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ৫টি এক থেকে দুই বছরব্যাপী ডিপ্লোমা কোর্স এবং ১৮ সপ্তাহব্যাপী ৬টি ন্যাশনাল সার্টিফিকেট কোর্স।

ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন কালিনারি আর্টস অ্যান্ড ক্যাটারিং ম্যানেজমেন্ট কোর্সে পড়ছেন ইশতিয়াক হোসেন ও নয়ন মোড়ল। ইন্টার্নশিপের জন্য মেলায় এসেছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। কোর্স শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ইন্টার্নশিপ পান, সেই আশা করছেন দুজনে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের উপব্যবস্থাপক মো.

জোবায়ের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয়টি ক্যাটগরির পদে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ জন্য সিভি নিচ্ছি। সিভি যাচাই-বাছাই শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে ভাইভার জন্য ডাকা হবে।’

মেলায় চাকরির জন্য আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ তারকা হোটেলে তিন বছর ধরে শেফ হিসেবে কাজ করছি। আরও ভালো চাকরির জন্য মেলায় এসেছি। সেরা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য সিভি দিয়েছি। আশা করি, দ্রুত ভাইভার জন্য ডাক পাব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ