Prothomalo:
2025-11-02@23:52:04 GMT

দেশে গবেষণার পরিবেশ গড়ে ওঠেনি

Published: 26th, February 2025 GMT

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশের বিগত সরকারগুলো গবেষণা ছাড়াই নানা ধরনের নীতি ও আইন প্রণয়ন করেছে। এর ফলে আইনের প্রয়োগও ঠিকঠাক হয়নি। গবেষণাকে সব সময় অবহেলা করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বর ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এতে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গবেষণা শুধু বই কিংবা প্রকাশনাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে, তা মানুষের কাজে আসবে না। গবেষণা মানুষের কল্যাণে হতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। কিন্তু দেশের গবেষণার পরিবেশ তেমনভাবে গড়ে তোলা হয়নি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংস্থা রয়েছে। নাম নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট। ওদের গবেষণার বাজেট মাত্র ৮৪ লাখ টাকা। এ টাকায় বড় আকারে কোনো গবেষণাই তাঁরা করতে পারেন না। জাতীয় বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ কত শতাংশ থাকা উচিত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই গবেষণা ও উদ্ভাবন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজক হলো জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। উদ্বোধনী পর্বে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চৌধুরী বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জামাল নজরুল ইসলামের পথ এখনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করছেন। এটি অন্য রকম পাওয়া। বাংলাদেশে এমন মানুষ খুব কমই এসেছেন, যিনি একই সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন।

উদ্বোধনী পর্বে স্মৃতিচারণা করেন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের মেয়ে সাদাফ সাজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের অত্যন্ত জটিল সমস্যা নিয়ে কাজ করতে আমার বাবা পছন্দ করতেন। মহাবিশ্ব–সম্পর্কিত গবেষণার প্রতি তিনি টান অনুভব করতেন। এসবের বাইরে দেশের বিকাশ নিয়ে তিনি গভীরভাবে ভাবতেন। মৌলিক গবেষণা ছাড়া দেশের বিকাশ হবে না, এমনটাই ভাবতেন তিনি। দেশে কাজ করার জন্যই ১৯৮৪ সালে তিনি বিদেশ থেকে চলে আসেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একদিন ভালো ভালো গবেষণা প্রবন্ধ বের হবে।

উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, অনেক বছর ধরে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বিশৃঙ্খল ছিল। দখলদারি সংস্কৃতি বজায় থাকলে গবেষণার চর্চা করা যায় না। এখন নতুন পরিবেশ গবেষণা করার জন্য উজ্জীবিত করছে। সরকার বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন গঠন করেনি। এটি করা উচিত।

উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য দেন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো.

কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ আল-আমিন, এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এম নুরুল আলম ও জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অঞ্জন কুমার চৌধুরী ও জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান। মেলার সার্বিক সহযোগিতায় ছিল চিটাগং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি।

বৈচিত্র্যময় স্টল, শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস

নাগলিঙ্গম দুর্লভ গাছ। এটির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মেলার বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের স্টলে গিয়ে দেখা মিলল নাগলিঙ্গমের একটি চারার। শুধু এটি নয়, এ স্টলে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গাছ বৈলামও প্রদর্শিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বললেন, নাগলিঙ্গম কিংবা বৈলামের মতো দুর্লভ গাছগুলো নির্বিচার কেটে ফেলা হচ্ছে। মূলত সচেতনতা সৃষ্টি করতেই এসব গাছের চারা প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে।

মেলায় এমন আরও ১২০টি স্টল ছিল। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাঁদের গবেষণা ও উদ্ভাবন তুলে ধরেছেন। এই যেমন, সংগীত বিভাগের স্টলে জায়গা পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র। মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের স্টলে প্রদর্শিত হয়েছে মাটির বিভিন্ন স্তর।

হালদা গবেষণাকেন্দ্রের স্টলে শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা গেল। সেখানে রাখা হয় হালদা নদীতে পাওয়া নানা জাতের মাছ। মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের স্টলেও নতুন প্রজাতির কাঁকড়া, চিংড়িসহ নানা ধরনের উদ্ভাবন প্রদর্শিত হয়েছে।

জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বইমেলার মতো গবেষণা মেলাও দীর্ঘ হওয়া উচিত। এতে গবেষকেরা তাঁদের কাজ মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন। এবারের মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। এতে তাঁরা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হবেন।

‘জামাল নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাননি’

আয়োজনে জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান ও বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তারিক আরাফাত।

কামরুল হাসান বলেন, ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায়, অনেক ছোট ছোট দেশেও বড় বিজ্ঞানী জন্মাতে পারেন। তেমনই বাংলাদেশে জন্মেছেন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, বিগত সরকারগুলো তাঁকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। তিনি রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাননি।

অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বিদেশে ভালো জায়গায় থাকতে পারতেন উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ভালো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম সবকিছু ছেড়ে মাতৃভূমির টানে তিনি ফিরে এলেন। কিন্তু তাঁকে কাজে লাগানো গেল না কেন। এর কারণ হলো, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতার অভাব।

আয়োজনে ‘হাইলাইটেড রিসার্চ টক’ অধিবেশনে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এস এম আবে কাউসার, আমীর মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ, লুলু ওয়াল মারজান, মো. শাহাদাত হোসেন, সাবিনা নার্গিস ও এস এম সোহরাব উদ্দিন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম ল নজর ল ইসল ম হ স ন বল প রদর শ পর ব শ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ