যেকোনো খেলার খেলোয়াড়েরা দেশসেরা নির্বাচিত হন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, বাংলাদেশের টেনিসে গত ১২ বছর কোনো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়নি। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম হওয়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ দিনে আজ বাংলাদেশের টেনিস পেয়েছে নতুন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।

ছেলেদের বিভাগে দেশসেরা যিনি হয়েছেন, তাঁর উঠে আসাটা হঠাৎ করে নয়। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন জারিফ আবরার। দেশে অনেক টুর্নামেন্টেই হয়েছেন সেরা। রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে পুরুষ এককের ফাইনালে জারিফ হারিয়েছেন বিকেএসপির মাহাদ বিন মালেককে। সেনানিবাস অফিসার্স ক্লাবের হয়ে খেলা জারিফ ৬-১, ৬-৩ গেমে জিতেছেন।

মেয়েদের এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের সুমাইয়া আক্তার। বয়স মাত্র ১৪ বছর ১ মাস। বছর চারেক ধরে খেলছেন টেনিস। মেয়েদের এককের ফাইনালে আজ বিকেএসপির সুবর্ণা খাতুনকে ৬-০, ৬-৪ গেমে হারিয়েছেন সুমাইয়া। সুস্মিতা সেনকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন দ্বৈতেও।

টেনিসে এলেন কীভাবে, জানতে চাইলে সুমাইয়া দিয়েছেন চমকপ্রদ এক তথ্য। ছোটখাটো গড়নের সুমাইয়া বললেন, ‘ক্লাস ফোরে যখন পড়ি.

..ঝালকাঠি শহরে আমাদের বাড়ির পাশে একদিন কাকের গায়ে ঢিল মেরেছিলাম। সেটাও বাঁ হাতে। কাকটা মারা যায় যায় অবস্থা হয়েছিল। স্যার তা দেখে আমাকে বলেন, তুমি টেনিস খেলবে? সেই শুরু। এটা ২০১৯ সালের কথা।’

সুমাইয়া যে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছেন, তা উঠে এসেছে তাঁর সঙ্গে গল্প করতে করতে। বাবা একটি খাবার হোটেলে চাকরি করেন, মা গৃহিণী। ছোট এক ভাই আছে। যখন নিজেকে নিয়ে বলছিলেন, রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে তখন সঙ্গে তাঁর স্যার জাহাঙ্গীর আলম, যিনি টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। এখন টেনিস শেখান।

সুমাইয়ার কাকের গল্পটা বলেন তিনিও, ‘সুমাইয়ার কাককে ঢিল মারা দেখে মনে হয়েছিল সে ভালো টেনিস খেলোয়াড় হতে পরবে। আজ সে দেশের সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। আমার বাসার কাছেই ওর বাবা কাজ করেন একটি হোটেলে।’

পাশে দাঁড়ানো সুমাইয়ার কণ্ঠে তখন ঝালকাঠিতে টেনিস সুবিধা না থাকার অতৃপ্তি, ‘এখানে কোর্টটা খুব নিম্নমানের। অনেক কষ্ট করে শিখতে হয়। তবে স্যার খুব যত্ন করে শেখান। তিনি আমাকে সব সহায়তা করেছেন। র‍্যাকেট কিনে দিয়েছেন।’

ঠিক উল্টোভাবে বেড়ে উঠেছেন জারিফ। বিদেশে খেলার স্বাদ নিয়েছেন তিনি অল্প বয়সেই। বাংলাদেশের হয়ে ডেভিস কাপ খেলা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়দের একজন জারিফ। একটি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২৩ সালে দুই ধাপে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বিশ্ব টেনিসের অন্যতম সেরা কোচ যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড অ্যাশলে হবসনের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গেলে থাকেনও হবসনের বাসায়। ৩ মার্চ আবার যাচ্ছেন।

ফ্লোরিডায় স্থানীয় একটি অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জারিফ। অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে রানারআপ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ছয়টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন। বয়সের তুলনায় তাঁর টেনিস মেধা ভালো।

অ্যাশলে বলেছেন, জারিফের দেশের বাইরে খেলা উচিত। উন্নত কোচিং সেন্টারে যাওয়া উচিত। সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন জারিফের পরিবার। মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র জারিফ বর্তমানে ফ্লোরিডায় একটি একাডেমিতে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

রাজশাহীতে মুজিববর্ষ জাতীয় টেনিস টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-১২ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। বালক অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে রানারআপ। ঢাকায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হাবিব মেমোরিয়াল আন্তক্লাব টেনিসে বালক অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালের মার্চে স্বাধীনতা দিবস টেনিসে অনূর্ধ্ব-১৬ বালক বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনূর্ধ্ব-১৬ জুনিয়র ডেভিস কাপে ছয় দেশের প্রতিপক্ষকেই হারিয়েছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জুনিয়র ডেভিস কাপে বাংলাদেশ দলে প্রথম সুযোগ মেলে।

জারিফের বাবা মেজর (অব.) সাজমুল হক খেলাপ্রেমী। ছেলেকে নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে জারিফ ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেনিসে নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। কিন্তু টেনিস খুব ব্যয়বহুল খেলা। তার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

যতই কঠিন হোক, জারিফের লক্ষ্য আরও সামনে যাওয়া। ‘আমি চাই ইউএস ওপেনসহ শীর্ষ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট খেলতে’—একবাক্যেই বুঝিয়ে দেন টেনিসে কতটা মজে আছেন জারিফ।

টেনিসে মজে আছেন সুমাইয়াও। জুনিয়র দলগত প্রতিযোগিতা বিলি জিন কিং কাপে খেলতে গতকাল রাতেই চার সদস্যের দলের সঙ্গী হয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা তাঁর। দারিদ্র্য জয় করাসহ সুমাইয়ার চোখে এখন অনেক অনেক স্বপ্ন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন র ধ ব হয় ছ ন ন হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

৪,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব আহমদ কায়কাউসের বিরুদ্ধে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক রেজাউল করিম। গতকাল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। 

দুদক গত ১৬ এপ্রিল এ নিয়ে আদেশ জারি করলেও গতকালই বিষয়টি জানাজানি হয়। দুদকের আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাশ কাটিয়ে আদানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকারের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন আহমদ কায়কাউস। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এ চুক্তি-সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ জন্য চুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় নথিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, বিদ্যুৎ কেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম, পদবি, বর্তমান ঠিকানা এবং এ নিয়ে কোনো বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছে কিনা– খতিয়ে দেখতে হবে।   

আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি শুরু থেকেই বিতর্কিত। ২৫ বছরের এ চুক্তির পদে পদে রয়েছে অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত রয়েছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ