কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে চলার ধারণাকে বলে ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স’। যা বহু বছর ধরেই চর্চিত। কর্মস্থল ও পারিবারিক জীবনকে আলাদা রেখে দুই জায়গায় সমানতালে এগিয়ে চলাই এ ধারণার মূল লক্ষ্য।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা না করে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনকে একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর এ ধারণাকে বলা হচ্ছে ‘ওয়ার্ক-লাইফ ফিট’।

একুশ শতকের শুরুর দিকে করপোরেট দুনিয়ার কর্মীদের মূল লক্ষ্য ছিল ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স। কর্মীর সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা নিশ্চিত করতে করপোরেট সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল পেশাজীবন ও ব্যক্তিজীবনের এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য। তবে জেন-জিরা (যাঁদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে) মনে করেন, জীবনে স্বাধীনতাই সব। তাঁরা ব্যক্তিজীবন ও পেশাজীবন—দুটিকেই সমানতালে উপভোগ করতে চান। এই প্রজন্ম চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে কাজ করতে অভ্যস্ত। জেন-জিদের উপযোগী ওয়ার্ক-লাইফ ফিট ধারণার সঙ্গে অবশ্য মিলেনিয়ালরা (যাঁদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে) মানিয়ে নিতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।

ওয়ার্ক-লাইফ ফিট কঠিন ধরাবাঁধা নিয়ম না মেনে পেশাজীবন ও ব্যক্তিজীবনকে একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলে। এই সমন্বয় কর্মজীবনে যেমন সফলতা এনে দেয়, তেমনি ব্যক্তিজীবনে আনে সন্তুষ্টি। এই ধারণার আরও কিছু বিষয় জেনে রাখুন।

নমনীয়তা

এ ধারণায় কর্মীকে কোথায়, কখন কিংবা কীভাবে কাজ করতে হবে, তা নিয়ে ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। কর্মী তাঁর সময়মতো ব্যক্তিজীবন ও পেশাজীবনের কাজ সামলে নেন।

প্রযুক্তি

বর্তমান সময় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের। কর্মীদের অল্প সময়ে অফিসের কাজ শেষ করতে সাহায্য করছে প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কাজে ভুলত্রুটি কমে যাচ্ছে বলে বেঁচে যাওয়া সময় ব্যক্তিগত কাজে লাগাতে পারছেন কর্মীরা।

সীমানা নির্ধারণ

কর্মদক্ষতা বাড়ানোর একটি অন্যতম উপায় হলো প্রতিটি কাজ আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে করা। একটি কাজের সঙ্গে আরেকটি কাজ গুলিয়ে না ফেলা। যদিও ওয়ার্ক-লাইফ ফিটের ধারণা মতে, আপনি যেকোনো সময়ই যেকোনো কাজ করতে পারেন। তবে আগে থেকে পরিকল্পনা করে প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি।

বিশ্বায়ন

বিশ্বায়নের এই সময়ে অনেকেই পৃথিবীর নানা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন। এ ধরনের কাজে সময়সূচির প্রথাগত ধারণার প্রয়োজন হয় না। ওয়ার্ক-লাইফ ফিট এমন সময় কাজ করার স্বাধীনতা দেয়, যা কারও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।

ওয়ার্ক-লাইফ ফিট কর্মক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিয়ে মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করেও যে কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়া যায়, তা একসময় কর্তাব্যক্তিরা ভাবতেও পারতেন না। কর্মজগতে এই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প শ জ বন জ বন ও ক ত গত ক জ কর জ বনক

এছাড়াও পড়ুন:

৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।

আরো পড়ুন:

নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”

পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”

প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”

গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প
  • কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • ৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী