Samakal:
2025-11-05@03:00:28 GMT

ফের অশান্ত মণিপুর

Published: 1st, March 2025 GMT

ফের অশান্ত মণিপুর

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। মন্দির লক্ষ্য করে পাহাড় থেকে গুলি চালিয়েছে কুকি জঙ্গিরা। গতকাল শুক্রবার মেইতেইদের পবিত্র স্থান ‘কংবা মারু’তে গিয়েছিলেন একদল ভক্ত। তখন এ গুলির ঘটনা ঘটে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।

এর আগে দিন বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে স্বেচ্ছায় ২৪৬টি অস্ত্র সমর্পণ করেছিল মণিপুরের সশস্ত্র মেইতেই গোষ্ঠী। এর একদিনের মাথায় গুলির এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সুরক্ষায় মেইতেইদের পবিত্র স্থানে গিয়েছিলেন একদল ভক্ত। তখন নিকটবর্তী পাহাড় থেকে তাদের লক্ষ্য করে মোট সাত রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এরপর থেকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

গুলির ঘটনার পর আশপাশের গ্রাম থেকে বাসিন্দারা রাস্তায় বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ জানান। বেশ কিছুক্ষণ তারা সড়ক অবরোধ করেন। শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহাড়ে থাকা বাঙ্কারগুলো ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

এদিকে মণিপুরে লুট করা ও অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র সমর্পণের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৬ মার্চ বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

উল্লেখ্য, মণিপুরে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে চলে ধারাবাহিক সংঘাত। রাজ্যের আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের অস্ত্রাগার লুট করে প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র নিয়ে যায় বিদ্রোহীরা। তখন থেকে উগ্রপন্থিদের হামলার শিকার হন অনেকে। হামলায় এ পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছ। এমনকি ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি মন্দিরেও।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মণ প র

এছাড়াও পড়ুন:

দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।

বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।

বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ