যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, পাকিস্তানের শরণার্থী ক্যাম্প থেকেই তাদের ক্রিকেট শেখা, স্টেডিয়াম নেই, আধুনিক একাডেমি নেই– আফগানিস্তান ক্রিকেট নিয়ে এত দিন এমন ধারণাই ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের। তবে সেটা যে সর্বৈব মিথ্যা, তা ক্যামেরার সামনে জোর গলায় বলেছেন আফগান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদি। ‘লোকে বলে আমাদের নাকি কিছু নেই। আমাদের স্টেডিয়াম, একাডেমিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে স্টেডিয়াম ৪০-৫০ হাজার দর্শকে ভরা থাকে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে এভাবেই আফগানদের সম্পর্কে ক্রিকেটবিশ্বের ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দেন শাহিদি। আর্থিক সচ্ছলতা বাদ দিলে তারা অনেক কিছুতেই বাংলাদেশের চেয়ে যে এগিয়ে, সে প্রমাণ দিয়েছেন এবারের আসরে। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে এসেই সেমিফাইনালের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে তারা যখন হতাশ, সেখানে সেই বৃষ্টির কল্যাণেই কিনা একটি পয়েন্ট পেয়ে দেশে ফিরেছেন শান্তরা!

আসলে এবারের আসরে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট দক্ষতা ও সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন রশিদ লতিফ-ইব্রাহিম জাদরানরা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মাত্র সাত বছরের মধ্যে আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে শিরোপা দৌড়ে অন্য দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আফগানরা। গত টি২০ বিশ্বকাপেই তারা সেমিফাইনাল খেলেছে। আর গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে মুম্বাইয়ে ম্যাক্সওয়েলের ম্যাজিক ইনিংসের কাছে হেরে যেতে হয় তাদের। ওয়ানডে ফরম্যাটেও যে তারা কতটা ভয়ংকর, সেটা ইংল্যান্ডকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এক সময় শুধু রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, নবিরাই ছিলেন আফগান ক্রিকেটের পোস্টারবয়। ধরে নেওয়া হতো দলটিতে শুধু রহস্যময় স্পিনার রয়েছে, তবে আজমত-ফারুকিরা দেখিয়ে দিয়েছেন পেস বোলিংয়েও আফগানরা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এখন এসব ট্যালেন্ট কি শুধুই গলির ক্রিকেট খেলে আসে? ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। বাংলাদেশে যেখানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের বাইরে ওয়ানডে ফরম্যাটের বিসিবি স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট নেই, সেখানে আফগানিস্তানে সাতটি ওয়ানডে ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট হয়। যার একটি আবার বয়সভিত্তিক। টি২০ ফরম্যাটের তিনটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হয় সেখানে, যার একটি ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক। প্রথম শ্রেণি ও তিন দিনের টুর্নামেন্টও রয়েছে আফগানিস্তানে। তাদের সমস্যা একটাই– বিদেশি ক্রিকেটাররা সেখানে খেলতে চান না। 

তবে ঘরোয়া ক্রিকেট আফগানিস্তানে ভীষণ জনপ্রিয়। ঢাকা লিগে এখন মেরেকেটেও পাঁচশ দর্শক হয় না। সেখানে কাবুল, কান্দাহার আর জালালাবাদের মাঠ ভরে যায় দর্শকে। আফগানিস্তানে অঞ্চলভিত্তিক পাঁচটি ভাগ হলো আমুয়া, বন্দে আমির, বুস্ত, স্পিনঘর ও মিস আয়ানক। সেখানে প্রতিটি অঞ্চলে আলাদা আলাদা তিন ফরম্যাটেই লিগ হয়। অথচ বাংলাদেশের সব কিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। অনেক আলোচনার পরও বাংলাদেশে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা আলোর মুখ দেখেনি। তাহলে আফগানিস্তানের ক্রিকেট এগোবে নাকি বাংলাদেশেরটা এগোবে? আফগানিস্তান বোর্ড থেকে প্রতিবছর দেশজুড়ে ট্যালেন্ট হান্ট হয়। ব্যাটার, পেসার, স্পিনারের বাইরে কোচও সন্ধান করা হয়। এজন্য আফগান বোর্ড স্পন্সরের দিকে চেয়ে থাকে না। আইসিসি থেকে পাওয়া অনুদানের ওপর নির্ভর করেই চলে এসব ট্যালেন্ট হান্ট। আর এই আফগানিস্তান আগামী এক দশকের মধ্যে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট জিতবে বলে বিশ্বাস দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেইল স্টেইনের। ‘বিশ্বের বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানের অনেক খেলোয়াড় অংশ নেয়। এটা তাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। তবে আমার মনে হয় তাদের চার দিনের ম্যাচেও মনোযোগী হতে হবে। কারণ ওয়ানডে ভার্সনটা কিন্তু টেস্টেরই ছোট ভার্সন। এবং সেটা থেকে টি২০ও শেখা যায়। যখন তারা এই তিন ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে– সত্যি কথা বলছি এর এক দশকের মধ্যেই তারা আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবে।’

ইএসপিএনক্রিকইনফোর টকশোতে ডেইল স্টেইনের সঙ্গে ওয়াসিম জাফরও ছিলেন। তিনিও এই ভবিতব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। ‘আফগানিস্তান উন্নতি করছে। তারা এখন যে কোনো দলকেই হারাতে পারে, আর তাতে আপসেট বলা যায় না। আশা করি, এই দলটি অনেক দূর যাবে।’ তবে ব্যাটিংয়ের সময় এক ধরনের অস্থিরতা থেকে আফগানদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডেইল স্টেইন। ‘আমরা এমন এক সময়ে বাস করি, যেখানে লোকজনের ধৈর্য খুব কম। আমরা ইনস্টাগ্রামে একটা স্টোরি শুধু ২ সেকেন্ড দেখি। আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রাও একই কাজ করেন। তারা খুব দ্রুত কিছু ঘটিয়ে ফেলতে চান। দেখা যায়, ক্রিজে সুইং পাচ্ছেন, অথচ এর মধ্যেই তারা চার-ছক্কা মারার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা চার দিনের ম্যাচ বেশি খেললে কমে যাবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ফরম য ট র আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ