ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক
Published: 3rd, March 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রী ও শ্যালিকাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর গ্রামে ওই দুজন খুন হন। ঘটনার পর থেকে আমির পলাতক।
নিহত দুজন হলেন ধজনগর গ্রামের মৃত রওশন আলীর মেয়ে জ্যোতি আক্তার (২০) ও তাঁর বোন স্মৃতি আক্তার (১৪)। প্রায় দেড় বছর আগে জ্যোতি আক্তার ও আমির হোসেনের বিয়ে হয়। আমিরের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জামতলী গ্রামে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ইউনুস পাঠান বলেন, আজ সোমবার সকালে খবর পেয়ে তাঁরা ওই বাড়িতে গিয়ে বিছানায় দুই বোনের লাশ দেখতে পান। তাঁদের শরীরে আঘাত না থাকায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারের লোকজন বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। গতকাল দিবাগত রাত একটার পর এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
আমিরের শ্যালক জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে জাহিদকে নিয়ে আলাদা ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন আমির। তাঁরা দুজন রাতে সাহ্রি খান। তখন আমির জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী ও শ্যালিকা সাহ্রি খাবেন না। পরে জাহিদ ঘরে চলে যান। আর আমির তাঁর স্ত্রীর ঘরে যান। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভাঙলে জাহিদ দেখেন ঘরের দরজা খোলা। তিনি দুলাভাই বলে ডাক দিলেও কোনো সাড়া পাননি। জাহিদ পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন তাঁর বোনদের হাত শক্ত, সোজা হচ্ছিল না। তিনি তখন পাশের বাড়ির লোকজনকে ডেকে আনেন।
ওসি আরও বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। স্মৃতির বাঁ পাশের চোয়ালের নিচে লাল জখম রয়েছে। জ্যোতিকে বালিশ চাপা দিয়ে ও স্মৃতিকে হাতে চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।