রোহিতের দলে থাকাই উচিত না, একমত তৃণমূল ও কংগ্রেস
Published: 4th, March 2025 GMT
রোহিত শর্মার কি ভারতের দলে থাকা উচিত? কংগ্রেসের মুখপাত্র শামা মোহামেদ বলেছিলেন, না। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সৌগত রায়। কিন্তু বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া এসব কথা ভালোভাবে নেননি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মাঝে ভারতের অধিনায়ককে নিয়ে এমন কথা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন দেবজিৎ।
আরও পড়ুন৬৫ বছর বয়সী স্পিনার একাই নিলেন ১০ উইকেট১৭ ঘণ্টা আগেচ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। গতকাল দুবাইয়ে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারায় রোহিত শর্মার দল। এই ম্যাচে ১৫ রান করে আউট হন রোহিত। তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ রোহিতের সমালোচনা করে একটি পোস্ট করেন কংগ্রেস নেতা শামা, তুমুল সমালোচনার কারণে যেটি পরে মুছেও ফেলা হয়, ‘রোহিত শর্মা খেলোয়াড় হিসেবে যথেষ্ট স্থূলকায়। ওজন কমানো দরকার এবং অবশ্যই ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষণহীন অধিনায়ক। পূর্বসূরিদের সঙ্গে তুলনা করলে তার মধ্যে বিশ্বমানের এমন কী আছে? সে মাঝারি মানের খেলোয়াড় ও অধিনায়ক, সৌভাগ্যবশত ভারতের অধিনায়ক হয়েছে।’
শামার এই মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেস নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে জানায়, তাঁর এই মন্তব্যে দলের অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেনি এবং পোস্টটি মুছে ফেলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির নেতারা শামার এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে তাক করে। বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা এক্স–এ টুইট করেন, ‘রাহুল গান্ধীর অধিনায়কত্বে যারা ৯০টি নির্বাচনে হেরেছে, তারা রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বকে আকর্ষণহীন বলছেন! তাহলে দিল্লিতে ৬টি ডাক, ৯০টি নির্বাচনে হার আকর্ষণীয় হলেও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় নয়। রোহিতের অধিনায়কত্বের ট্র্যাক রেকর্ড অসাধারণ।’
আরও পড়ুনছিলেন স্থপতি, বানাতে চেয়েছিলেন সিনেমা, এখন ক্রিকেটে ভারতের জয়ের নায়ক১৮ ঘণ্টা আগেবিজেপি নেতা রাধিকা খেরাও ছেড়ে কথা বলেননি কংগ্রেস নেতা শামাকে। তাঁর উক্তি, ‘কী দুঃসাহস! এই একই কংগ্রেস দশকের পর দশক অ্যাথলেটদের অপমান করেছে, স্বীকৃতি দেয়নি, আর এখন ক্রিকেটের কিংবদন্তিকেও উপহাস করছে! রোহিত শর্মা বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। তোমাদের নেতা রাহুল গান্ধী তো নিজের দলেরও অধিনায়ক হতে পারেনি।’
তবে শামা মোহামেদের পক্ষেও লোকজন আছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সৌগত রায় যেমন ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, তিনিও মনে করেন রোহিতের ভারত জাতীয় দলে থাকা উচিত নয়, ‘আমি একমত। এটা রাজনীতি নয়, ক্রিকেট। রোহিত শর্মাকে আর কত দিন ছাড় দেওয়া হবে? দুই বছরে একটি সেঞ্চুরি করে অন্য ম্যাচগুলোয় দ্রুত আউট হয়ে যাওয়াটা দলে তাঁর জায়গার পক্ষে কথা বলে না। দলে তাঁর কর্তৃত্বের জায়গাটা থাকা উচিত না। কংগ্রেস নেতা ঠিকই বলেছেন। এমনকি তার ওজন নিয়েও শঙ্কার জায়গা আছে। হ্যাঁ, তার ওজন বেশি। কিন্তু লোকে এসব পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না।’
দল যখন আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলছে, তখন একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির কাছ থেকে এমন তুচ্ছ কথা দুর্ভাগ্যজনক। এটা দল কিংবা খেলোয়াড়দের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়াসৌগত রায় আরও বলেন, ‘আমরা যদি ফিট ও সামর্থ্যবান অধিনায়ক চাই, দলে অনেক নতুন খেলোয়াড় আছেন যারা ভালো খেলছেন। ফিটনেসই প্রধান বিষয় হলে বুমরার মতো কেউ যে ফিট থাকলে দারুণ অধিনায়ক হতে পারে। এমনকি শ্রেয়াস আইয়ারেরও ভালো সম্ভাবনা আছে। কিন্তু রোহিত শর্মার দলে জায়গা থাকা অনুচিত।’
এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তিন ম্যাচে ২৫.
বিসিসিআই অবশ্য তাঁদের অধিনায়ককে নিয়ে এমন মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ শামার মন্তব্য নিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এ নিয়ে বলেছেন, ‘দল যখন আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলছে, তখন একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির কাছ থেকে এমন তুচ্ছ কথা দুর্ভাগ্যজনক। এটা দল কিংবা খেলোয়াড়দের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সবাই নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিচ্ছে এবং ফলও দেখা যাচ্ছে। আশা করি ব্যক্তিগত প্রচারের লক্ষ্যে লোকে এসব অবমাননাকর মন্তব্য পরিহার করবেন।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুবাইয়ে আগামীকাল প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে বিতর্ক বা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতেও কোনো স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান হলে তখন তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি উঠতে পারে।
গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা এ অভিমত জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫–এর খসড়া এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে এ সভা হয়। রাত ৮টা থেকে সভা শুরু হয়ে পৌনে ১২টা পর্যন্ত সভা চলে। সভায় জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ার সঙ্গে তাঁরা মোটামুটি একমত। অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপি একমত। সেখানে শব্দ, বাক্য গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনকে জানাবে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে দলীয় মতামত কমিশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই সনদের খসড়ায় ৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত আছে। এ ছাড়া জুলাই সনদের খসড়ার বাকি ছয় দফা অঙ্গীকারনামার সঙ্গে তাঁরা একমত। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অভিমত হচ্ছে, এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণ-অভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে।
এমতাবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা এটিকে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একটা বিপ্লবকে সংবিধানে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতেই থাকতে চায় বিএনপি।
বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করতে চায় তারা। পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলটি সেখানে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু শব্দ ও ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপির) পক্ষ থেকে মতামত জানানো শেষ। যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছি, আমরা আর কোনো মতামত দেব না।’
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি আর আলোচনা করতে চায় না। তবে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। কারণ, সংস্কারের ব্যাপারে তারা আন্তরিক।