রোহিতের দলে থাকাই উচিত না, একমত তৃণমূল ও কংগ্রেস
Published: 4th, March 2025 GMT
রোহিত শর্মার কি ভারতের দলে থাকা উচিত? কংগ্রেসের মুখপাত্র শামা মোহামেদ বলেছিলেন, না। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সৌগত রায়। কিন্তু বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া এসব কথা ভালোভাবে নেননি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মাঝে ভারতের অধিনায়ককে নিয়ে এমন কথা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন দেবজিৎ।
আরও পড়ুন৬৫ বছর বয়সী স্পিনার একাই নিলেন ১০ উইকেট১৭ ঘণ্টা আগেচ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। গতকাল দুবাইয়ে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারায় রোহিত শর্মার দল। এই ম্যাচে ১৫ রান করে আউট হন রোহিত। তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ রোহিতের সমালোচনা করে একটি পোস্ট করেন কংগ্রেস নেতা শামা, তুমুল সমালোচনার কারণে যেটি পরে মুছেও ফেলা হয়, ‘রোহিত শর্মা খেলোয়াড় হিসেবে যথেষ্ট স্থূলকায়। ওজন কমানো দরকার এবং অবশ্যই ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষণহীন অধিনায়ক। পূর্বসূরিদের সঙ্গে তুলনা করলে তার মধ্যে বিশ্বমানের এমন কী আছে? সে মাঝারি মানের খেলোয়াড় ও অধিনায়ক, সৌভাগ্যবশত ভারতের অধিনায়ক হয়েছে।’
শামার এই মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেস নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে জানায়, তাঁর এই মন্তব্যে দলের অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেনি এবং পোস্টটি মুছে ফেলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির নেতারা শামার এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে তাক করে। বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা এক্স–এ টুইট করেন, ‘রাহুল গান্ধীর অধিনায়কত্বে যারা ৯০টি নির্বাচনে হেরেছে, তারা রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বকে আকর্ষণহীন বলছেন! তাহলে দিল্লিতে ৬টি ডাক, ৯০টি নির্বাচনে হার আকর্ষণীয় হলেও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় নয়। রোহিতের অধিনায়কত্বের ট্র্যাক রেকর্ড অসাধারণ।’
আরও পড়ুনছিলেন স্থপতি, বানাতে চেয়েছিলেন সিনেমা, এখন ক্রিকেটে ভারতের জয়ের নায়ক১৮ ঘণ্টা আগেবিজেপি নেতা রাধিকা খেরাও ছেড়ে কথা বলেননি কংগ্রেস নেতা শামাকে। তাঁর উক্তি, ‘কী দুঃসাহস! এই একই কংগ্রেস দশকের পর দশক অ্যাথলেটদের অপমান করেছে, স্বীকৃতি দেয়নি, আর এখন ক্রিকেটের কিংবদন্তিকেও উপহাস করছে! রোহিত শর্মা বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। তোমাদের নেতা রাহুল গান্ধী তো নিজের দলেরও অধিনায়ক হতে পারেনি।’
তবে শামা মোহামেদের পক্ষেও লোকজন আছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সৌগত রায় যেমন ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, তিনিও মনে করেন রোহিতের ভারত জাতীয় দলে থাকা উচিত নয়, ‘আমি একমত। এটা রাজনীতি নয়, ক্রিকেট। রোহিত শর্মাকে আর কত দিন ছাড় দেওয়া হবে? দুই বছরে একটি সেঞ্চুরি করে অন্য ম্যাচগুলোয় দ্রুত আউট হয়ে যাওয়াটা দলে তাঁর জায়গার পক্ষে কথা বলে না। দলে তাঁর কর্তৃত্বের জায়গাটা থাকা উচিত না। কংগ্রেস নেতা ঠিকই বলেছেন। এমনকি তার ওজন নিয়েও শঙ্কার জায়গা আছে। হ্যাঁ, তার ওজন বেশি। কিন্তু লোকে এসব পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না।’
দল যখন আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলছে, তখন একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির কাছ থেকে এমন তুচ্ছ কথা দুর্ভাগ্যজনক। এটা দল কিংবা খেলোয়াড়দের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়াসৌগত রায় আরও বলেন, ‘আমরা যদি ফিট ও সামর্থ্যবান অধিনায়ক চাই, দলে অনেক নতুন খেলোয়াড় আছেন যারা ভালো খেলছেন। ফিটনেসই প্রধান বিষয় হলে বুমরার মতো কেউ যে ফিট থাকলে দারুণ অধিনায়ক হতে পারে। এমনকি শ্রেয়াস আইয়ারেরও ভালো সম্ভাবনা আছে। কিন্তু রোহিত শর্মার দলে জায়গা থাকা অনুচিত।’
এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তিন ম্যাচে ২৫.
বিসিসিআই অবশ্য তাঁদের অধিনায়ককে নিয়ে এমন মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ শামার মন্তব্য নিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এ নিয়ে বলেছেন, ‘দল যখন আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলছে, তখন একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির কাছ থেকে এমন তুচ্ছ কথা দুর্ভাগ্যজনক। এটা দল কিংবা খেলোয়াড়দের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সবাই নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিচ্ছে এবং ফলও দেখা যাচ্ছে। আশা করি ব্যক্তিগত প্রচারের লক্ষ্যে লোকে এসব অবমাননাকর মন্তব্য পরিহার করবেন।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুবাইয়ে আগামীকাল প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট, একমত ইউনূস ও তারেক
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনীতিতে টানাপোড়েন যেভাবে অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছিল, লন্ডন বৈঠকে তা অনেকটা কেটেছে।
গতকাল শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে লন্ডন বৈঠক নিয়ে দেশে যে কৌতূহল ও উৎকণ্ঠা ছিল, সেটার সমাপ্তি ঘটেছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। এর মধ্যেই ৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারপ্রধানের এই ঘোষণা বিএনপি মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে দলটির নেতারা প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টির কথা জানান। অবশ্য সরকার–ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের জন্য উপদেষ্টাদের কেউ কেউ জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে অধ্যাপক ইউনূসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এপ্রিলকে উপযুক্ত মনে করেছিলেন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের এক সপ্তাহের মাথায় লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নতুন ঘোষণা এল। ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট হতে পারে।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ঘটনাকে বিবৃতি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। দলগুলো বলেছে, এর মাধ্যমে জাতি ‘স্বস্তির বার্তা’ পেয়েছে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে অনেকের দুর্ভাবনা ছিল। সেটা কেটে গেছে, গোটা জাতি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। অধ্যাপক ইউনূস দুঃসময়ে জাতির অভিভাবক হিসেবে নিজের বিশালত্ব, গভীরতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। বিএনপি নেতা তারেক রহমানও যথোচিত সৌজন্যবোধ, পরিণত বুদ্ধি ও রাষ্ট্রনায়কসুলভ সম্ভাবনার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি বলেন, বিচার বা সংস্কার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির বড় ধরনের মতপার্থক্য নেই। মতপার্থক্য ছিল নির্বাচনের সময় নিয়ে। দুজনের (ইউনূস-তারেক) বৈঠকের পর এই মতপার্থক্যও অনেকটা কমে এসেছে।
যদিও লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে প্রক্রিয়ায় সমঝোতা হয়েছে এবং সেটি যেভাবে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর নেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁদের ভিন্নমত নেই। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের সমঝোতায়ও তাঁরা অসন্তুষ্ট নন। তাঁদের প্রশ্ন এক জায়গায়। সেটি হচ্ছে, সরকার এভাবে একটি দলের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দিতে পারে কি না? এটা কতটা নৈতিক।
লন্ডন বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচনসংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত। এনসিপি মনে করে, নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে সেখানকার সময় সকাল নয়টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটা) অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। তাঁরা প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলেন। এর মধ্যে বড় একটি সময় অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান একান্তে বৈঠক করেন। পরে ওই হোটেলেই যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও তারেক রহমানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। একান্ত আলোচনায় দুই নেতা ‘সন্তুষ্ট’ হয়েছেন বলে তাঁরা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি (সরকার ও বিএনপি) পড়ে শোনান নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তাতে বলা হয়, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রশ্নোত্তরে যা বললেন সরকার ও বিএনপির প্রতিনিধিপরে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান, তাহলে কি সরকার এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা থেকে সরে আসছে? জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ ঘোষণায় এই বিষয়টি সুস্পষ্টই বলা আছে। আপনারা শুনেছেন। যদি সব কাজ সময়মতো আমরা করতে পারি এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেটা করা যেতে পারে।’
তাহলে নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণে সমস্যাটা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না। নির্বাচন সম্পর্কে আজকে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দুই পক্ষই। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ছাড়া লন্ডন বৈঠকে আর কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এ ছাড়া সংস্কার, বিচার, জুলাই ঘোষণা নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।
তবে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা তো হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা সবাই চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব। বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্যে এসেছি, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও সেটা আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে জুলাই সনদ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে তো ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে। এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত আছে যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে। সংস্কারের ব্যাপারেও একই উত্তর আমাকে দিতে হয় যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সংস্কার ও জুলাই সনদ—দুটোই করব। সবার ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আমি নিশ্চিত, খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখানে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’ এ প্রশ্নে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘এটা তাদের (এনসিপি) জিজ্ঞেস করুন। প্রতিটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞের বিচারপ্রক্রিয়া তিনি শেষ করতে চান এবং পরে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, সেটা হয়ে থাকলে নির্বাচনের রূপরেখায় এর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে এর উত্তর দেওয়া আছে। সংস্কার এবং বিচার; দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে এবং আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) যে এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগেই দেখতে পাব।’
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না বা তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান সাহেব যখনই ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, সময়মতো।’
সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘বৈঠকে আলোচনায় আপনারা কি সন্তুষ্ট?’ সমস্বরে এ প্রশ্নের জবাব দেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ। দুজনই বলেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।’ এর সঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো বলছি নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ এরপর খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’
‘চারদিকে যে অনিশ্চয়তা ছিল, সেটা কেটেছে’অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের পর ঢাকায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, বৈঠক সফল হয়েছে। সবকিছু যে একটা অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থাকে কাটিয়ে জাতিকে আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন দুই নেতা।
মির্জা ফখরুল বলেন, লন্ডনের বৈঠকের পর তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। এ সময় তারেক রহমান দলের নেতা–কর্মীদের অভিনন্দন ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য তাঁর মা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
বিএনপির মহাসচিব দলের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি (ইউনূস) তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সবকিছু একটা অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থা কাটিয়ে জাতিকে আবার সামনের দিকে ও আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন দুই নেতা।