গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা এলাকায় প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্তঃসন্তা এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

গত সোমবার (৩ মার্চ) রাতে বাসন থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন নিহতের মা নাজমা বেগম। পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত ওই নারী শ্রমিক হলেন, ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানা জাগির ভূগলী এলাকার আফসার আলীর মেয়ে আফসানা আক্তার (৩০)। গ্রেপ্তারকৃত হলেন, ময়মনসিংহ নান্দাইলের চাঁন মিয়ার ছেলে হৃদয় খান ওরফে মল্লিক মিয়া (৩০)। 

মামলার বাদি নিহতের মা নাজমা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেছেন, “প্রায় ১০ বছর আগে তার মেয়ে আফসানা আক্তারের সঙ্গে হৃদয় খানের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুইটি সন্তান রয়েছে এবং আফসানা আক্তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আফসানা আক্তার গাজীপুর মহানগরীর প্যানোরামা এ্যাপারেলস্ লিমিটেড-এ সুইং জুনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। 

‘বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত এবং ঠিকমতো ভরনপোষণ দিত না। সবসময় গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য চাপ দিত। আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় আর গার্মেন্টসে করবে না। একথা শুনে মেয়ের জামাই হৃদয় খান উত্তেজিত হয়ে আমার মেয়েকে শারিরীক নির্যাতন করে এবং গার্মেন্টেসের চাকরি করতে বাধ্য করে।”

বাদি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘‘গত ২ মার্চ সকালে পূর্বের ন্যায় আমার মেয়েকে অত্যাচার করে। আসামির অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে আসামি আমার মেয়েকে মারতে উদ্যত হয় এবং আমার মেয়েকে বলে যে, ‘তুই মরে গেলে আমি শান্তি পাই, তুই মরে যা।’ পরে আমার মেয়ে কর্মস্থলে চলে যায়। আমার মেয়ে আফসানা আক্তার আসামির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুপুর অনুমানানিক ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই কারখানার ছাদ হতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।’’ 

ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে কারখানার ছাদ থেকে নারী শ্রমিক আত্মহত্যার ঘটনায় সোমবার সকালে ওই কারখানা শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় শ্রমিকরা দাবি তোলে ছুটি না দেওয়ায় ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে থাকা ব্যক্তিগত গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) দুলাল চন্দ্র জানান, ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ম য় ক দ য় র কর র কর ছ কর ছ ন ঘটন য় আফস ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।

শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।

সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।

সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’

সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি
  • গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী
  • দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ