গাজীপুরে অন্তঃসত্ত্বা পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার
Published: 4th, March 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা এলাকায় প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্তঃসন্তা এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত সোমবার (৩ মার্চ) রাতে বাসন থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন নিহতের মা নাজমা বেগম। পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত ওই নারী শ্রমিক হলেন, ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানা জাগির ভূগলী এলাকার আফসার আলীর মেয়ে আফসানা আক্তার (৩০)। গ্রেপ্তারকৃত হলেন, ময়মনসিংহ নান্দাইলের চাঁন মিয়ার ছেলে হৃদয় খান ওরফে মল্লিক মিয়া (৩০)।
মামলার বাদি নিহতের মা নাজমা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেছেন, “প্রায় ১০ বছর আগে তার মেয়ে আফসানা আক্তারের সঙ্গে হৃদয় খানের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুইটি সন্তান রয়েছে এবং আফসানা আক্তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আফসানা আক্তার গাজীপুর মহানগরীর প্যানোরামা এ্যাপারেলস্ লিমিটেড-এ সুইং জুনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
‘বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত এবং ঠিকমতো ভরনপোষণ দিত না। সবসময় গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য চাপ দিত। আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় আর গার্মেন্টসে করবে না। একথা শুনে মেয়ের জামাই হৃদয় খান উত্তেজিত হয়ে আমার মেয়েকে শারিরীক নির্যাতন করে এবং গার্মেন্টেসের চাকরি করতে বাধ্য করে।”
বাদি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘‘গত ২ মার্চ সকালে পূর্বের ন্যায় আমার মেয়েকে অত্যাচার করে। আসামির অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে আসামি আমার মেয়েকে মারতে উদ্যত হয় এবং আমার মেয়েকে বলে যে, ‘তুই মরে গেলে আমি শান্তি পাই, তুই মরে যা।’ পরে আমার মেয়ে কর্মস্থলে চলে যায়। আমার মেয়ে আফসানা আক্তার আসামির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুপুর অনুমানানিক ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই কারখানার ছাদ হতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।’’
ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে কারখানার ছাদ থেকে নারী শ্রমিক আত্মহত্যার ঘটনায় সোমবার সকালে ওই কারখানা শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় শ্রমিকরা দাবি তোলে ছুটি না দেওয়ায় ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে থাকা ব্যক্তিগত গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) দুলাল চন্দ্র জানান, ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ম য় ক দ য় র কর র কর ছ কর ছ ন ঘটন য় আফস ন
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’