বিশেষ ট্রেন কমে অর্ধেকে, বিপাকে পড়বেন ঘরে ফেরা মানুষ
Published: 7th, March 2025 GMT
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের জন্য ঘরে ফিরতে ব্যাকুল থাকেন দেশের মানুষ। স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়ার জন্য বেশির ভাগেরই ভরসা থাকে ট্রেন। তাই ঈদের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। যাত্রীদের এই চাপ সামাল দিতে বিশেষ ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। তবে গতবারের তুলনায় এবার বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমেছে অর্ধেক। এতে ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় ২০টি (১০ জোড়া) বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছিল। কিন্তু এবার চলবে মাত্র ১০টি ট্রেন (৫ জোড়া)। এর মধ্যে একটি রুটে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে এবং চারটি রুটে কোনো বিশেষ ট্রেন দেওয়া হচ্ছে না।
ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরা যাত্রীদের চাপ থাকার পরও ট্রেন কমানোর বিষয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, ইঞ্জিন ও কোচের সংকটের পাশাপাশি চাহিদাও কমেছে বিশেষ ট্রেনের। তাই বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে। ট্রেন কমলেও যাত্রীদের সমস্যা হবে না।
তবে রেলওয়ের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে মানুষ সড়কপথের চেয়ে রেলে ভ্রমণকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ঈদের সময়েও এ চাপ বাড়বে। এ অবস্থায় বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে উল্টো কমিয়ে দেওয়ার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।
ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে ১৪ মার্চ, ওই দিন ২৪ মার্চের টিকিট দেওয়া হবে। অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। আর ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৪ মার্চ, ওই দিন ৩ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে। টিকিট ক্রয় সহজ করার জন্য পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট সকাল আটটা থেকে এবং পূর্বাঞ্চলের আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বেলা দুইটা থেকে বিক্রি করা হবে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়ার পরিবর্তে এক জোড়া ট্রেন চলবে। গত বছর চলাচল করলেও এবার পার্বতীপুর-দিনাজপুর রুট, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর রুট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুট কোনো বিশেষ ট্রেন চলবে না।
বন্দরনগর ও শিল্প এলাকা হওয়ার কারণে চাকরি ও ব্যবসার প্রয়োজনে চট্টগ্রামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের অধিকাংশ ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরেন। তাঁদের অনেকেই স্বল্প আয়ের ব্যক্তি। সড়কপথে বাড়তি ভাড়া বাঁচাতে এবং যানজট থেকে রেহাই পেতে যাত্রার জন্য ট্রেনকে প্রাধান্য দেন। এতে ওই সময় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। বিশেষ ট্রেন কমায় তাঁরা বিপাকে পড়বেন। ঈদের সময় চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চাহিদা থাকে বেশি।
গত বছর চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া (৪টি) বিশেষ ট্রেন চলাচল করেছিল। এবার চলবে মাত্র এক জোড়া ট্রেন। চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল নামের এই ট্রেন চট্টগ্রাম ছাড়বে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে এবং চাঁদপুর পৌঁছাবে রাত সোয়া ৮টায়। ফিরতি পথে চাঁদপুর ছাড়বে রাত সাড়ে ৩টায়। চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেন ঢাকা ছাড়বে সকাল সাড়ে ৯টায়। দেওয়ানগঞ্জে পৌঁছাবে বেলা সাড়ে ৩টায়। অন্যদিকে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন ছাড়বে বিকেল সাড়ে ৪টায়, ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সোয়া ১০টায়। গত বছরও এ রুটে এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করেছিল।
জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে পার্বতীপুর ঈদ ট্রেন জয়দেবপুর ছেড়ে যাবে সন্ধ্যা সাতটায়। পার্বতীপুরে পৌঁছাবে রাত আড়াইটায়। আর পার্বতীপুর থেকে ছাড়বে সকাল সোয়া ৮টায়, জয়দেবপুরে যাবে বেলা ২টা ২০ মিনিটে।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের যাতায়াতে দুই জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে। এর মধ্যে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-৫ ও ৬ চলাচল করবে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ রুটে। এই ট্রেন ভৈরববাজার ছাড়বে সকাল ছয়টায়। কিশোরগঞ্জে পৌঁছাবে সকাল আটটায়। নামাজ শেষে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরববাজারের উদ্দেশে ছাড়বে দুপুর ১২টায়।
শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-৭ ও ৮ চলাচল করবে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে। ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর কিশোরগঞ্জ ছাড়বে দুপুর ১২টায়।
বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে রেলওয়ের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) এ বি এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার রুটে এক অর্থে ট্রেন কমছে না। গতবার যে বিশেষ ট্রেন চলত, সেটি এখন নিয়মিত করা হয়েছে এবং দুবার করে আসা-যাওয়া করছে। গত বছর চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া বিশেষ ট্রেন দেওয়া হলেও যাত্রীদের চাহিদা ছিল কম। এ জন্য দুই জোড়ার পরিবর্তে এক জোড়া ট্রেন দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য রুটে বিশেষ ট্রেন দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ইঞ্জিন সংকট প্রকটের কারণে দেওয়া যাচ্ছে না।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম নগরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে মানুষ সড়কপথের পরিবর্তে ট্রেনে করে ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। আবার ঈদের সময় সড়কপথে বাড়তি ভাতা ও যানজট নিয়ে অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়। এ জন্য বাড়ি ফিরতে ট্রেনকে বেছে নেন যাত্রীরা। তাই চাহিদা আরও বাড়বে। সেখানে ঈদের সময় বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে কমানোর ঘটনা জন–আকাঙ্ক্ষার বিপরীত। রেলের উচিত হবে আগের মতো বিশেষ ট্রেন চালু রাখা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ র ঈদ স প শ ল ট র ন কম র লওয় র গত বছর এক জ ড় র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
তিনি হিমালয়ে উঠেছেন সাইকেল নিয়ে
বরফের ওপর সাইকেল নিয়ে সন্তর্পণে এগোচ্ছেন। একটু হড়কে গেলেই অবধারিত মৃত্যু, গিরিখাত বেয়ে একেবারে নিচে। কখনো সাইকেল চালিয়ে, কখনো কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। এভারেস্ট অঞ্চলের কংমা লা পাস অতিক্রম করার সময় একটু ভয় ভয় লাগছিল। কারণ, এখানটায় এসে মৃত্যুর অনেক ঘটনা আছে। ট্রেইলটা বেশ কঠিন। ১০ কেজি ওজনের সাইকেল কাঁধে, আর ছয়–সাত কেজির ব্যাগ নিয়ে ওপরে উঠতে হচ্ছিল।
‘ভয়ের সঙ্গে আবার সুন্দর মুহূর্তও আছে। পাসগুলো থেকে নামার সময় ভালো লাগত। অপূর্ব সুন্দর সব দৃশ্য,’ বলছিলেন আরিফুর রহমান উজ্জল (৪১)। কুমিল্লার মানুষ, উজ্জল নামেই পরিচিত। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাইকেল নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন এভারেস্ট অঞ্চলসহ হিমালয়ের নানা ট্রেক। এসব ট্রেকে সাধারণত পর্বতারোহীরা পায়ে হেঁটে যান। উজ্জল গেছেন দ্বিচক্রযানে চেপে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সর্বশেষ কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রায় দুই মাসের অভিযান শেষ করে কাঠমান্ডুতে এসেছেন।
চ্যালেঞ্জিং এই অভিযানে ছিল কাদামাখা পাথুরে পথ, অতি উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা, ভূমিধস, বরফে ঢাকা পথ, গ্লেসিয়ার ও একদম খাড়া টানা একেকবার ৩–৪ কিলোমিটার রাস্তা। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে রাতে না ঘুমিয়ে পরদিন ট্রেক করতে হয়েছে। বরফ ও রৌদের তাপ, জ্বর, হাতে ফ্রস্টবাইট, পায়ে মাসাল ক্র্যাম্প, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁকে একেকটা পাস অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেক পর্বতারোহীর কাছে এটি স্রেফ পাগলামি। এই অভিযানে উজ্জলকে কখনো সাইকেল চালাতে হয়েছে, কখনো কাঁধে বইতে হয়েছে, কখনোবা ঠেলে উপরে তুলতে হয়েছে।
মানাসলু সার্কিট ট্রেইলপর্বতারোহণ এমনিতেই কষ্টসাধ্য কাজ। নিজের শরীরটা ওপরে টেনে তোলাই যেখানে বিরাট চ্যালেঞ্জ, সেখানে উজ্জল সাইকেল নিয়ে এক অভিযানেই ঘুরেছেন এভারেস্টসহ হিমালয়ের তিনটি ট্রেইলে। তিনি ঘুরেছেন নেপালের মানাসলু ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেইল। নেপালের পশ্চিমের এই দুটি ট্রেইলে ঘোরা শেষ করে পাড়ি দিয়েছেন ৭০০ কিলোমিটার পূর্বে এভারেস্টের তিন পাসে। পাস তিনটি হচ্ছে কংমা লা পাস, চো লা পাস এবং রেঞ্জো লা পাস।
৭ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করেন এই সাইক্লিস্ট। তার আগে ঢাকা থেকে বিমানে করে গেছেন কাঠমান্ডু। শুরুতেই মানাসলু সার্কিট ট্রেইল। এটা গিরিপথ, রাস্তা। মানাসলু পর্বতকে ঘিরে যে রাস্তা সেটাকে সার্কিট বলে। এই মানাসলুর সর্বোচ্চ বিন্দু, যার উচ্চতা ১৭ হাজার ৩৯০ ফুট। সেখানে নিজের প্রিয় দ্বিচক্রযানটির চাকার ছাপ রেখে এসেছেন। ১৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্কিট ট্রেইলটি শেষ করতে তাঁর ১১ দিন লেগেছে।
রেঞ্জো লা পাস