ফাল্গুনের হিম ছড়ানো সকাল। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের গোতিথা গ্রামের পাকা রাস্তা শেষে মেঠো পথ পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই মনিলাল মাহাতোর বাড়ি। মাটির তৈরি বাড়িটিতে যেন উৎসবের আমেজ বইছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়া অয়ন্ত বালা মাহাতো এই বাড়ির সন্তান। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শেষে বাড়িতে ফিরেছেন অয়ন্ত।

অয়ন্ত বালার মা শেফালি রানী মাহাতো মেয়ের জন্য সাধ্যের মধ্যে নানা পদের রান্নায় ব্যস্ত। বললেন, মেয়ে দুই বছর ধরে বিকেএসপিতে পড়ালেখা করছে। ছুটি হলেই বাড়িতে আসে। কিন্তু এবার বিদেশ থেকে ফেরার পর সবকিছু অন্য রকম লাগছে। অয়ন্তের বড় বোন, ভগ্নিপতি ও একমাত্র ভাই বাড়িতে এসেছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন তাঁকে দেখতে বাড়িতে আসছে।

অয়ন্তের বাবা মনিলাল মাহাতো প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মেয়ে বিদেশে খেলতে গিয়েছিল, এটাই বড় কথা। সবার কাছে আশীর্বাদ চাই, যেন মেয়ে ভালো কিছু করতে পারে।’ বড় বোন রিনা রানী মাহাতো জানান, বিদেশ থেকে বোন ফেরার পর দেখা করতে স্বামী-সন্তান নিয়ে এসেছেন। তিনি বোনের জন্য দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ কামনা করেন।

অয়ন্তদের বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের অনেকেই। স্থানীয় বকুল চন্দ্র মাহাতো বলেন, তাঁদের মেয়ে আজ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। অয়ন্তের পথ অনুসরণ করে তাঁদের ফুটবল একাডেমির অনেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। পাশের তাড়াশ উপজেলার ভাটারপাড়া গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী রাজিব চন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘অয়ন্ত বালা মাহাতোর সঙ্গে কথা বলতে ও দেখা করতে এসেছি।’

ফুটবলার অয়ন্ত বালা মাহাতো প্রথম আলোকে বলেন, তাড়াশের বিষমডাঙা গার্লস স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ। এ জন্য স্থানীয় আদিবাসী প্রমীলা ফুটবল একাডেমির সদস্য হন। প্রশিক্ষক নিহার রঞ্জন মাহাতো ও জেলার কৃতী ফুটবলার প্রয়াত ইমদাদুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মা–বাবার অনুমতি নিয়ে তাঁদের চেষ্টায় আমার আজ এখানে আসা। ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করার জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ কামনা করি।’

এর আগে সকাল আটটার দিকে সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু-কিশোরীর সঙ্গে অনুশীলনে ব্যস্ত অয়ন্ত বালা। বলেন, ‘এ মাঠেই আমার ফুটবলে হাতেখড়ি। তাই বাড়িতে এলে ছুটে আসি এ মাঠে। অন্যদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠি।’

অয়ন্ত বালা মাহাতোর উপস্থিতির কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ সবাই একটু বেশি মনোযোগী ও খুশি। ধলজান গ্রামের লক্ষ্মণ চন্দ্র মাহাতোর মেয়ে ও বিষমডাঙা গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা রানী মাহাতো বলে, ‘আমাদের অয়ন্ত প্রথমে বিকেএসপিতে পড়ালেখার সুযোগ পেল, এখন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই গৌরবের। তার সঙ্গে আমরাও যেন ভালো কিছু করতে পারি, সবার আশীর্বাদ কামনা করি।’

জেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রমীলা ক্রীড়া একাডেমির প্রশিক্ষক নিহার রঞ্জন মাহাতো প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাডেমির সদস্য অয়ন্ত বালা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের প্রীতি ফুটবল খেলতে গিয়েছিল। মূল একাদশে সুযোগ না পেলেও অয়ন্তকে নিয়ে আমরা গর্বিত। সুযোগ পেলে একদিন ভালো কিছু করতে পারবে।’

অয়ন্তদের নিয়ে প্রথম আলোয় ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর ‘ফুটবলে স্বপ্ন বুনছে তারা’, ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৩ কিশোরী ফুটবলার স্বপ্নপূরণের পথে’ ও গত ২১ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নারী ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়া অয়ন্ত বালা মাহাতোর গ্রামে আনন্দ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অয়ন ত ব ল ফ টবল দল প রথম আল এক ড ম র ফ টবল র অয়ন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক