লোহাগাড়া উপজেলার টংকাবতী ও ডলুখালের চরে আগে চাষ হতো সবজির। টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, বাদাম, শিমসহ নানারকম শাক-সবজির চাষ করতেন কৃষকরা। গেল বছরও হয়েছে সবজির চাষ। এ বছর দেখা গেল ভিন্নচিত্র। সবজির চাষ ছেড়ে তামাক চাষ করেছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে স্থানীয় লোকজন ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় উপজেলায় ১৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে; যা গত বছরের দ্বিগুণ। 
জানা যায়, বহুজাতিক তামাক কোম্পানির প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে ফসল চাষ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
চরম্বার লক্ষ্মণেরখীল এলাকার তামাক চাষি তপন বড়ুয়া জানান, ফসল আবাদে কোনো সমস্যা হলে কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। অথচ উৎপাদনের আগেই তামাক কোম্পানি দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ১০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছেন তপন বড়ুয়া। 
চাষিরা জানান, আগে তিনি শসা, ভুট্টা, মরিচ, টমেটো চাষ করতেন। এসব পণ্য যথাসময়ে বিক্রি ও দামের নিশ্চয়তা থাকে না। তাই তামাক চাষ করেছেন। প্রতি কানি জমিতে তামাক চাষে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। লাভ প্রায় অর্ধেক।
জানা যায়, উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার হেক্টর, অনাবাদি জমি রয়েছে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর। উপজেলায় মোট আবাদকৃত তামাক চাষের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্টিত তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা কৃষি অফিস। স্থানীয়রা বলছেন, লোহাগাড়ার ফসলি জমিতে চলছে বিষাক্ত তামাকের আগ্রাসন। টংকাবতী ও ডলুখালের  চরে ব্যাপকভাবে হচ্ছে তামাক চাষ। তামাকে পানি সেচ দিতে গিয়ে শুকিয়ে গেছে চরম্বা রাবার ড্যামের পানি। এতে হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পূর্ব কলাউজান লক্ষ্মণেরখীল ও রেঞ্জ অফিস এলাকা, চরম্বা ইউনিয়নের বাইয়ারপাড়া, মাইজবিলা, নাফারটিলা বাজারের পূর্ব পাশে, রাজঘাটা, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ঘোনার মোড়, পল্লানের বিল পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচাঁদা, দক্ষিণ সড়াইয়া বলিরজুম, চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা ও কিল্লাখোলা নামক এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে। তবে এখানকার বেশির ভাগ চাষি পাশের লামা ও চকরিয়া উপজেলা থেকে আসা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে বেশি তামাকের চাষ হয়েছে। তামাক ক্ষেতের পাশেই লোকালয় ও কৃষকের বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে তামাক পোড়ানোর চুল্লি।
তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় প্রতিনিয়ত তামাকের চাষ বাড়ছে বলে ধারণা স্থানীয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘তামাক কোম্পানি কৃষকদের অগ্রিম টাকা ও উৎপাদিত তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়ায় ক্ষতিকর এ ফসলের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে। তারপরও অনেক কৃষক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

ইকবাল হোসেন বলেন, ‘তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের ফলে মুখে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচা বেড়ে ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো ঝুঁকি থাকে।’ 
পরিবেশকর্মী ও গ্রিন নার্সারির মালিক অধ্যাপক হামিদুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণের ভয়াবহ ক্ষতির কথা জেনেও শুধু অধিক লাভের আশায় তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হয়। এ কারণে নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা। এতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ম ক চ ষ কর চ ষ কর ছ ন ক ষকদ র ন ক ষকর চরম ব উপজ ল সবজ র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি জমিতে সস্তায় সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ তদন্তে কমিটি, কার্যক্রম স্থগিত

সরকারি জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ আজ রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উল্লিখিত ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ এবং হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সচিবসহ কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সেতু বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আমলা ও কর্মচারীদের জন্য। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা রয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।

ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা। ফ্ল্যাট পাওয়া সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৩২। তাঁদের মধ্যে চারজন চাকরিতে রয়েছেন, দুজন অবসরের পর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, বাকিরা অবসরে গেছেন। সচিবদের বাইরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা পেয়েছেন ফ্ল্যাট।

সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।

আরও পড়ুনসরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নিয়েছেন সচিবেরা, তালিকায় কারা রয়েছেন১৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ