অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) যে ‘অক্সিলারি ফোর্স’ বা অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কার্যকারিতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, পুলিশকে সহায়তাকারী হিসেবে ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আইন মোতাবেক পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত সদস্যরা যে ক্ষমতা ভোগ ও দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরাও সেটা করবেন। আবার পুলিশ কর্মকর্তারা আইনগতভাবে যে সুরক্ষা পান, সেটাও তাঁরা পাবেন।

অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগের আগে প্রশ্ন উঠবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেসব বাহিনী আছে, তারা কতটা দায়িত্ব পালন করছেন? দেশে এখন যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি, আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা নাজুক কেন?  

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছেন, এমন লোকদের ‘অক্সিলারি ফোর্সে’ নেওয়া হবে। তঁাদের প্রশিক্ষণ থাকলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘অক্সিলারি ফোর্স বলতে বোঝায় পুরো ফোর্স নয়, তবে আধা সরকারি ফোর্স, পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এ ধরনের ফোর্স ব্যবহার করার বিষয়টি পুলিশ আইনেই আছে।’ যুক্তরাজ্যসহ অনেক
দেশে এই ব্যবস্থা আছে। সেখানে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ করা হয়।

মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ ধারায় আছে, ডিএমপি কমিশনার যদি মনে করেন যেকোনো ব্যক্তিকে সহযোগী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন। কিন্তু নিকট অতীতে এ ধরনের নিয়োগের কোনো দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নেই। এর ফলে এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে—তা একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কাদের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

মূল কথা হলো, অতিরিক্ত বাহিনীর যে সংখ্যক সদস্য নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখের বেশি। আর ডিএমপির লোকবল মাত্র ৩৪ হাজার। এর সঙ্গে ৫০০ সদস্যের সংযোজন কার্যত কোনো ফল দেবে না। ঢাকা শহরে যতগুলো শপিং মল ও মার্কেট আছে, সেগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়।

ডিএমপি কমিশনার বিভিন্ন স্থানে টহল বাড়ানোর কথা বলছেন, আবার বাসায় ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলে অর্থ ও অলংকার নিজেদের দায়িত্বে রাখার কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ আমলে যাঁরা ডিএমপির কমিশনার ছিলেন, তাঁরাও একই রকম সদুপদেশ দিতেন। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়।

অতএব, কেবল লোকদেখানো কিংবা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ কতটা কার্যকর হবে, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলার অবনতির পেছনে মব ভায়োলেন্স অনেকটা দায়ী। অথচ এ ক্ষেত্রে ডিএমপির তেমন সক্রিয়তা দেখা যায় না। তাঁরা সক্রিয় থাকলে কতিপয় ব্যক্তি আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে থানা অবরোধ করতে পারতেন না।

রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি ও মব সহিংসতার মতো অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আসন্ন ঈদে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো মূল্যে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যেটা নতুন সমস্যা তৈরি করে বা প্রশ্ন তৈরি করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সদস য ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ