৩৮ বছরের পুরোনো দুই জাহাজ ৩৭ কোটি টাকায় বিক্রি করল বিএসসি
Published: 11th, March 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ক্ষতিগ্রস্ত তেলবাহী দুটি ট্যাংকার জাহাজ ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সীতাকুণ্ডের পুরোনো জাহাজভাঙা ইয়ার্ড জিরি সুবেদার শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ জাহাজ দুটি কিনে নিয়েছে। এই ট্যাংকার জাহাজ দুটি হলো এমটি বাংলার জ্যোতি এবং এমটি বাংলার সৌরভ।
ট্যাংকার দুটি বিক্রির দরপত্র নিলামে মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিল মাস্টার অ্যান্ড ব্রাদার্স। তারা দর দিয়েছিল ৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানটি ট্যাংকার দুটির মূল্য পরিশোধ না করায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জাহাজ দুটি কেনার সুযোগ পায় জিরি সুবেদার শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানটি ট্যাংকার দুটির দাম ছাড়াও কর বাবদ ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে। এরপরই ৫ মার্চ ট্যাংকার দুটি প্রতিষ্ঠানটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে শিপিং করপোরেশনের কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ সময় শিপিং করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসসি জানায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন অয়েল জেটিতে নোঙর করে রাখা বিএসসির তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’তে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তাতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছিলেন। এরপর ৫ অক্টোবর মধ্যরাতে কোম্পানিটির আরেকটি ট্যাংকার ‘এমটি বাংলার সৌরভ’–এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তাতেও এক নাবিক নিহত হন। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে এই দুটি ট্যাংকার জাহাজে অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু হয়। এরপরই ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এমটি বাংলার জ্যোতি এবং এমটি বাংলার সৌরভ ট্যাংকার দুটি ১৯৮৮ সালে মোট ৬০ কোটি টাকায় ডেনমার্ক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ট্যাংকার দুটির প্রতিটির তেল পরিবহন ক্ষমতা ১৪ হাজার ৫৪১ টন। গত ৩৮ বছরে ট্যাংকার দুটি ৪ কোটি ২৫ লাখ টন তেল পরিবহন করেছে। এতে বিএসসি প্রায় ৬০৭ কোটি টাকা নিট আয় করেছে।
বিক্রির পর ট্যাংকার দুটি সীতাকুণ্ডের পুরোনো জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। সেখানে এই দুটি ট্যাংকার জাহাজ কেটে বিক্রি করবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান জিরি সুবেদার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস