‘মূল্যায়ন’ না করায় নারী প্রকল্প কর্মকর্তাকে চেয়ার ছুড়ে মারলেন যুবদল নেতা
Published: 11th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আয়েশা সিদ্দিকাকে (৩৮) চেয়ার ছুড়ে মেরেছেন পৌরসভা যুবদলের নেতা মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। এ সময় কার্যালয়ের টেবিলও ভাঙচুর করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে যুবদল নেতা শহিদ এ হামলা চালান বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নারী প্রকল্প কর্মকর্তার ওপর হামলার কথা স্বীকার করেছেন যুবদল নেতা শহিদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘খারাপ আচরণ করায় মাথা ঠিক ছিল না। তাই চেয়ার ছুড়ে মেরেছি। অনেকবার গেছি ওই কার্যালয়ে। কিন্তু আমাকে মূল্যায়ন করেননি। অথচ আমরা দলের ত্যাগী কর্মী।’
উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও হামলার শিকার পিআইও আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাস ধরে রোজ কয়েকবার করে পিআইও কার্যালয়ে এসে যুবদল নেতা শহিদ কাজ পাওয়ার জন্য ধরনা দিচ্ছিলেন। এক মাসে আগে অস্ত্র নিয়ে প্রকল্প কার্যালয়ে গেলে আয়েশা সিদ্দিকা যুবদল নেতাকে বের করে দেন। এ সময় পিআইওকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
জানা গেছে, আজ বিকেলে আবারও পিআইও কার্যালয়ে এসে কাজ পাওয়ার দাবি জানান শহিদ। তখন পিআইও তার চেয়ারে বসা ছিলেন। শহিদকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়। অন্য কাউকে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। এ কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে শহিদ পিআইওর দিকে চেয়ার ছুড়ে মারলে সেটি তাঁর কার্যালয়ের টেবিলের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে গ্লাস ও টেবিল ভেঙে যায়। উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ভাঙচুরের শব্দ শুনে দৌড়ে এলে পালিয়ে যান শহিদ।
দলীয় সূত্র জানায়, হামলাকারী শহিদ সাবেক পৌরসভা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ নগর শরীফ পাড়ার বাসিন্দা তিনি। দলে এখনো নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, শহিদের আগে পদবি থাকলেও বর্তমানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদ-পদবি নেই।
হামলার শিকার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছিল তাঁর ওপর। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
আয়েশা সিদ্দিকা অভিযোগ করে বলেন, ওই যুবদল নেতা একবার অস্ত্র নিয়ে কার্যালয়ে এলে তিনি বের করে দেন। এতে যুবদল নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিলেন। আজ দুপুরে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন শহিদ। তখন তিনি মাথা সরিয়ে নিলে অল্পের জন্য বেঁচে যান। পরে তাঁর অফিসের চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করেন যুবদল নেতা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, ‘সরকারি দপ্তরে হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য বদল ন ত কর মকর ত প রথম আল প রকল প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস