চট্টগ্রামের রাউজানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আয়েশা সিদ্দিকাকে (৩৮) চেয়ার ছুড়ে মেরেছেন পৌরসভা যুবদলের নেতা মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। এ সময় কার্যালয়ের টেবিলও ভাঙচুর করেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে যুবদল নেতা শহিদ এ হামলা চালান বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

নারী প্রকল্প কর্মকর্তার ওপর হামলার কথা স্বীকার করেছেন যুবদল নেতা শহিদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘খারাপ আচরণ করায় মাথা ঠিক ছিল না। তাই চেয়ার ছুড়ে মেরেছি। অনেকবার গেছি ওই কার্যালয়ে। কিন্তু আমাকে মূল্যায়ন করেননি। অথচ আমরা দলের ত্যাগী কর্মী।’

উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও হামলার শিকার পিআইও আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাস ধরে রোজ কয়েকবার করে পিআইও কার্যালয়ে এসে যুবদল নেতা শহিদ কাজ পাওয়ার জন্য ধরনা দিচ্ছিলেন। এক মাসে আগে অস্ত্র নিয়ে প্রকল্প কার্যালয়ে গেলে আয়েশা সিদ্দিকা যুবদল নেতাকে বের করে দেন। এ সময় পিআইওকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

জানা গেছে, আজ বিকেলে আবারও পিআইও কার্যালয়ে এসে কাজ পাওয়ার দাবি জানান শহিদ। তখন পিআইও তার চেয়ারে বসা ছিলেন। শহিদকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়। অন্য কাউকে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। এ কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে শহিদ পিআইওর দিকে চেয়ার ছুড়ে মারলে সেটি তাঁর কার্যালয়ের টেবিলের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে গ্লাস ও টেবিল ভেঙে যায়। উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ভাঙচুরের শব্দ শুনে দৌড়ে এলে পালিয়ে যান শহিদ।

দলীয় সূত্র জানায়, হামলাকারী শহিদ সাবেক পৌরসভা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ নগর শরীফ পাড়ার বাসিন্দা তিনি। দলে এখনো নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, শহিদের আগে পদবি থাকলেও বর্তমানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদ-পদবি নেই।

হামলার শিকার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছিল তাঁর ওপর। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

আয়েশা সিদ্দিকা অভিযোগ করে বলেন, ওই যুবদল নেতা একবার অস্ত্র নিয়ে কার্যালয়ে এলে তিনি বের করে দেন। এতে যুবদল নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিলেন। আজ দুপুরে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন শহিদ। তখন তিনি মাথা সরিয়ে নিলে অল্পের জন্য বেঁচে যান। পরে তাঁর অফিসের চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করেন যুবদল নেতা।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, ‘সরকারি দপ্তরে হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল ন ত কর মকর ত প রথম আল প রকল প উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ