‘প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিঁড়ে, পাখি যায় উড়ে যায়’, আজও গানটা জনপ্রিয়। অবসরে, মন খারাপে, প্রিয় মানুষকে হারিয়ে অন্ধকার ঘরে কানে হেডফোন দিয়ে শুনে থাকেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এমন কথা শেয়ার করেছেন। অনেকের মতে, গানটির দৃশ্যও মন খারাপের উদ্রেক করে। দৃশ্যটিও দেখে থাকেন অনেকে। যেখানে দেখা যায়, নায়িকার বিয়ে হয়ে গেছে, লঞ্চে করে স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছে সে। অন্যদিকে তাকে হারানোর বেদনায় নদীর কূল ধরে গাইতে গাইতে ছুটছে নায়ক।
গানটা ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমার। পরিচালক ইফতেখার জাহান। ছবির কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য করেছিলেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। ১৯৯৬ সালের এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বাপ্পারাজ, অমিত হাসান, শাবনাজ, এ টি এম শামসুজ্জামান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। সেই হিসাবে দুই যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। বিশ্বায়ন ও ইন্টারনেটের প্রভাবে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ইতিমধ্যে শিল্পাঙ্গন থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রাঙ্গন—প্রায় প্রতিটি মাধ্যমেই এসেছে নানা পরিবর্তন। ওটিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে পছন্দমতো কনটেন্ট খুঁজে নিচ্ছেন দর্শক। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ২৯ বছর আগের একটি সিনেমার সংলাপ নিয়ে হইচই পড়ে যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনেমার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়বে, এমন আশা করাটা দুরাশাই বটে।

আরও পড়ুননিজেও বুঝতাম, ছ্যাঁকা খাওয়া চরিত্রটাই ক্লিক করবে: বাপ্পারাজ৩ ঘণ্টা আগে

যদিও ‘দুরাশা’ বললাম, তবে এটা কিন্তু সত্যিই ঘটেছে। ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমার ‘প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিঁড়ে, পাখি যায় উড়ে যায়’ গানের ঠিক আগের দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়ার আগে সিনেমাটি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলে নেওয়া যাক। সিনেমার প্রধান দুটি চরিত্র বকুল আর হেনা। তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। একসময় পড়ালেখার জন্য বকুল শহরে চলে যায়। হেনাকে নিয়মিত চিঠি যদিও লেখে কিন্তু বকুলের বাবা পোস্ট অফিসের পিয়নের সঙ্গে যোগসাজশ করে চিঠিগুলো হেনার কাছে যাতে না পৌঁছায়, সেই বন্দোবস্ত করে। দিন যায়, হেনার বেদনা বাড়ে।

আরও পড়ুনতোমরা যখন ডাকবে আমি আসব১৮ জানুয়ারি ২০১৮

অন্যদিকে হেনার বাবা শহরের এক বড়লোক পরিবারে বিয়ে ঠিক করে তার। আর যেদিন হেনার বিয়ে হয়ে যায়, সেদিনই শহর থেকে ফেরে বকুল। গ্রামে এসেই হেনাদের বাড়িতে যায়। গিয়ে দেখে, বাড়িঘর বিয়েবাড়ির মতো করে সাজানো। তখন হেনার বাবার কাছে সে জিজ্ঞেস করে, ‘চাচা, বাড়িঘর এত সাজানো কেন? আর হেনা কোথায়? চাচা, কথা বলছেন না যে। চুপ করে আছেন কেন?’ জবাবে চাচা বলেন, ‘হেনাকে তুমি ভুলে যাও, হেনার বিয়ে হয়ে গেছে।’ কথাটা শোনামাত্র বকুলের কণ্ঠ ধরে আসে। ধরা গলায় সে বলে, ‘না না, হেনার বিয়ে হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি না।’ পরপরই নদীর কূল ধরে  ‘প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিঁড়ে, পাখি যায় উড়ে যায়’ গানটি গাইতে গাইতে বকুল ছুটতে থাকে। হেনাকেও চোখের জল ফেলতে দেখা যায়। হেনা চরিত্রে শাবনাজ ও বকুল চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন বাপ্পারাজ।

ওয়েব সিরিজ ‘রক্তঋণ’ দিয়ে ফিরছেন বাপ্পারাজ। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ