যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কিছু শর্তে সম্মত পুতিন
Published: 14th, March 2025 GMT
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে রাশিয়া। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে সংঘাতের মূল কারণগুলোর সুরাহা করতে হবে। আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে মস্কো পৌঁছেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। তারা প্রাথমিকভাবে এক মাসের যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিয়েভ ও ওয়াশিংটন মনে করে, এই এক মাসের মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উইটকফ মস্কো সফর করছেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মস্কোয় বেলারুশ নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব সামনে এগিয়ে নিতে হলে বেশ কিছু সুক্ষ্ম ও গুরুতর বিষয়ে সমাধান জরুরি। প্রথমেই তিনি সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করা এবং স্থায়ী শান্তির পথে এগোনো যায়—এমন যুদ্ধবিরতি চান বলে জানান।
তার বক্তব্যে আরও বেশ কিছু বিষয় বা শর্ত স্পষ্ট ছিল। এর মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধবিরতিতে সেনা সংগ্রহের মাধ্যমে আরও সংঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া যাবে না এবং রাশিয়ার দখলে থাকা কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয়দের অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয়। অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রয়োজনে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পরামর্শ দেন পুতিন।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ চান তিনি। বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন, ক্রেমলিন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত হবে। ইতিমধ্যে ইউক্রেন এতে সমর্থন জানিয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘ধারণাটি নিজেই সঠিক এবং আমরা অবশ্যই এটিকে সমর্থন করি। কিন্তু এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার। আমি মনে করি, আমাদের মার্কিন সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত।’ পুতিন বলেন, তিনি ট্রাম্পকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সংঘাতের অবসানের ধারণাকে সমর্থন করি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় রাশিয়ার হামলা, ১০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও শিল্প অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতের বেলা চালানো ওই হামলায় ১০ লাখের বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ইগর ক্লিমেনকো বলেছেন, পাঁচটি অঞ্চলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আগুন নেভানো এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে।
যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলা সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। তবে দেশটিতে শীত মৌসুম শুরুর এই সময়ে মস্কো বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে হামলা আরও তীব্র করেছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আরও আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত এই সপ্তাহান্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে জার্মানি যাচ্ছেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন স্টিভ উইটকফ। তিনি বার্লিনে প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তির সর্বশেষ সংস্করণ নিয়ে আলোচনা করবেন।
আজ শনিবার জেলেনস্কি বলেছেন, শুক্রবার রাতের হামলায় রাশিয়া ৪৫০টির বেশি ড্রোন এবং ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিমেনকো জানান, নিপ্রোপেত্রোভস্ক, কিরোভোহরাদ, মাইকোলাইভ, ওদেসা ও চেরনিহিভ অঞ্চলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা হামলায় কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা ওড়ার মধ্যে দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম হওয়ায় ট্র্যাক করা কঠিন।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, বিদ্যুৎ গ্রিডে ব্যাপক সামরিক হামলার কারণে ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অস্থায়ীভাবে বাইরের সব বিদ্যুৎ–সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন আবার সরবরাহ শুরুর চেষ্টা চলছে।
কেন্দ্রটি ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অবস্থিত। এটি বর্তমানে চালু না থাকলেও চুল্লিগুলো ঠান্ডা রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে রাশিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর রোমান বুসারগিন বলেছেন, সারাতোভে ড্রোন হামলায় একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে দুজন নিহত হয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন বড়দিনের আগেই যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে তারা ইউক্রেন ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করেছে। তবে শিগগির সমাধানের লক্ষণ খুব কমই দেখা যাচ্ছে।
জার্মানির বার্লিনের এই আলোচনায় কোন কোন ইউরোপীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন।
ইউক্রেন ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার সংশোধিত সংস্করণ যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়ার পরই উইটকফ-জেলেনস্কি বৈঠক হচ্ছে। এই প্রস্তাবের বিষয় নভেম্বরের শেষের দিকে প্রথম সামনে আসে। এর ফলে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
আলোচনায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে। মস্কো বলছে, ইউক্রেন সরে না গেলে দনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে বলপূর্বক দখল করে নেবে তারা।