রাজশাহীতে পুলিশের কাছে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার আসামি কৃষকদলের এক নেতাকে লাথি মেরেছেন। পরে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। গত শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে বোয়ালিয়া থানার এ ঘটনাটির ভিডিও রবিবার (১৬ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গ্রেপ্তার আসামির নাম আবুল কালাম (৫৫)। তিনি রাজশাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও রাজশাহী জেলার ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। 

মামলার বাদী উষামা বিন ইকবাল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেফিট করেছেন যে, মামলায় আবুল কালামের নামটি এসেছে ভুল করে। কালামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তার।

আরো পড়ুন:

আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক
দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে: ফখরুল

বিএনপি জনগণের দল, জনগণই আমাদের বড় শক্তি: টুকু

আবুল কালাম গ্রেপ্তার হলে বোয়ালিয়া থানায় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী যান তাকে ছাড়িয়ে আনতে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যপক্ষের নেতাকর্মীরা থানায় যান যেন তাকে ছাড়া না হয়। ওই সময় পুলিশ তাকে আদালতে নেওয়ার জন্য থানা থেকে বের করছিল। তখনই সামনে কৃষকদলের রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন সরকার টিটুকে দেখে লাথি মেরে বসেন আবুল কালাম। পরে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

নগরের শাহমখদুম থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান গিয়েছিলেন আবুল কালামের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‍“আবুল কালাম আমাদের  শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়ায় আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি, বিএনপির রাজনীতি করতেন। এখন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সমিতির দখল নিতে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”

কৃষকদলের নেতা আলামিন সরকার টিটু অভিযোগ করেন, “আবুল কালাম ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলার আসামি। তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়া স্বত্ত্বেও বিএনপির কিছু নামধারী নেতা থানায় গিয়ে তাকে ছাড়াতে তদবির করেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিবাদ করায় ওসিসহ পুলিশের সামনেই তিনি (আবুল কালাম) আমাকে লাথি মারেন।”

থানায় কৃষকদল নেতাকে আসামির লাথি ও হাতাহাতির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, “তেমন কিছু ঘটেনি।”

এদিকে, আবুল কালামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলার বাদীর কোনো অভিযোগ নেই। বাদী এটা এফিডেফিট করে দিয়েছেন। তারপরও তাকে গ্রেপ্তার করা দুঃখজনক।

বিএডিসি সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহীর সভাপতি মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল বলেন, “আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করলে শ্রমিকেরা ট্রাক বন্ধ করে দিতে পারেন। সার বিক্রিও বন্ধ হতে পারে। এমনটি হলে রাজশাহী অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে। যারা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, তারা এ উদ্দেশ্যেই আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করায়।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে দ্রুত আবুল কালামের মুক্তির দাবি জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, বিএডিসি সরকার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলার সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির জেলার সহসভাপতি মো.

তোজাম্মেল, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বাদী এফিডেফিট করে দেওয়ার পরেও আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হাসান বলেন, “এফিডেফিট বিবেচনার বিষয় আদালতের। আমরা এজাহারভুক্ত আসামি পেয়েছি, তাই তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে গ্রেপ্তারের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য নেই।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ অভ য গ গ র প ত র কর ন ত কর ম এফ ড ফ ট ব এনপ র ক ষকদল

এছাড়াও পড়ুন:

সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত

মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।

এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা

গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। 

আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।

ঢাকা/শাহীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ