দীর্ঘ সাত বছর ধরে অসহায়দের মধ্যে মাসব্যাপী সাহ্‌রির খাবার বিতরণ করছেন পাবনার তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান মাহাবুব। মা-বাবার নামে শহরের কালাচাঁদপাড়া মহল্লায় পৈতৃক জায়গায় ফাউন্ডেশনটি গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে বছরজুড়ে নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। 
তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৯ সালে করোনা মহামারির সময়ে সাহ্‌রির খাবার বিতরণ শুরু করেন তারা। প্রথম বছর প্রতিদিন ৩৫ প্যাকেট খাবার বিতরণ দিয়ে শুরু করে এখন ৩০০ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা নেই বললেই চলে। পরিবারসহ বন্ধু-বান্ধবের সহায়তা ও নিজেদের অর্থে তারা এই মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। 
এই খাবারের সবচেয়ে বড় সুফলভোগী জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় রোগী ও তাদের স্বজন। এ ছাড়া পৌর এলাকার মা-শিশু হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ আটটি স্থানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় এসব খাবার। দিনমজুর থেকে শুরু করে শ্রমিক, ভিক্ষুক, ভ্যান-রিকশা-অটোচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ খাবার নেন। 
নিজ বাড়ির আঙিনায় ইটের চুলায় রান্না হয় সাহ্‌রির খাবার। মাহাবুব নিজেই তাঁর সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে সামলান রান্নার সব আয়োজন। এর পর চলে প্যাকেট করে অসহায়দের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার পালা। রমজান মাসে এভাবেই কেটে যায় তাদের রাত। বর্তমানে প্রতিদিন খাবার তৈরিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাহাবুব। বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও নিজ পরিবারের সদস্যদের দেওয়া অর্থ এবং সমাজের কিছু বিত্তবান মানুষের জাকাত-ফিতরা থেকে হচ্ছে এই খরচের জোগান। 
সাহ্‌রি বিতরণ নিয়ে সংগঠনের সদস্যরা জানান, মানবসেবার এই কাজ বিনা পারিশ্রমিকেই করছেন তারা। কাজের সঙ্গে জড়িতরা এ কাজে আত্মতৃপ্তির কথা জানান। 
দেওয়ান মাহাবুব সমকালকে বলেন, পৈতৃক জায়গা আমরা ফাউন্ডেশনের নামে দান করেছি। এ কাজে, বিশেষ করে আমার বাবার সহযোগিতা অনেক। অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার ইচ্ছা থেকেই কাজগুলো করছি। যতদিন বেঁচে থাকব, সুস্থ থাকব, মানবসেবার কাজ করে যাব। 
তবে ফাউন্ডেশনের জায়গায় যদি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হতো, তাহলে শুধু রমজান নয়, পুরো বছর দরিদ্র-অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়া যেত। এ কাজে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা এগিয়ে এলে সমাজের অসহায় মানুষের সেবা পাওয়া আরও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র অসহ য় ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ