শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত হাওরাঞ্চলগুলো এ দেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার হাওরগুলোতে বছরের কয়েক মাস মাত্র চাষাবাস করার সুযোগ থাকে। যথাসময়ে বাঁধ না হলে সেই ফসলও আকস্মিক বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। দুঃখজনক হচ্ছে প্রতিবছর সময়মতো ফসল রক্ষা বাঁধ হয় না। এবারের এমন অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়। বর্তমানে জেলাটির হাওরগুলোতে বাঁধ নির্মাণের সব প্রকল্পের কাজ শেষ বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে এসব কাজকে অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে এতে অসংগতি, অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতারা। গত বুধবার সুনামগঞ্জ শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসন ও পাউবোর ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন কৃষকদের পক্ষে সোচ্চার হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, এবারও কাজের শুরু থেকেই একধরনের ঢিলেমি ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, পাউবো ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নানা অনিয়ম হয়েছে। এ কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। এখনো বিভিন্ন বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। অথচ বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। এতে বাঁধ দুর্বল হবে। তবে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাওরে বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্যসচিব মামুন হাওলাদার দাবি করেন, সব প্রকল্পের মাটির কাজ শেষ। এখন বাঁধের ঢালে ঘাস লাগানো, মাটি শক্তকরণ এসব আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে। অনেক জায়গায় ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফসলের কোনো ঝুঁকি নেই।
২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তখন পাউবোর ঠিকাদারদের কাছ থেকে বাঁধ নির্মাণের ভার চলে যায় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের কাছে। কিছুসংখ্যক ঠিকাদারের বদলে এর সুবিধাভোগী এখন কয়েক শ কৃষক। ফসলের সুরক্ষায় দায়িত্ব কৃষকদের চেয়ে ভালো আর কে পালন করতে পারেন। যার কারণে এ পিআইসি মডেল বেশ প্রশংসিত হয়। কিন্তু সেই পিআইসি গঠনেও দুর্বৃত্তায়ন আমরা দেখি। এ নিয়ে প্রথম আলো প্রতিবছরই একাধিকবার সম্পাদকীয় লিখেছে।
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরেও পিআইসি গঠন ও বাঁধ নির্মাণে একই ধরনের অভিযোগ আসাটা খুবই দুঃখজনক। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত জানুয়ারি মাসে সুনামগঞ্জে গিয়ে বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কেউ অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ প আইস রকল প ফসল র
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে আবারও এক শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত আটটার দিকে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
নিহত মো. রাকিব (২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে কাজ করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
এর আগে চলতি বছরের ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন লাইব্রেরি ভবনের চারতলা থেকে পড়ে মো. আরিফুল নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এর তিন মাসের মাথায় আবারও এক শ্রমিকের মৃত্যু হলো।
ভবনটির নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ওই ভবনের ৯ম তলায় আস্তরের কাজ করছিলেন রাকিব। শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দিকে ভবনের জানালা দিয়ে তিনি ময়লা-আবর্জনা ফেলতে গিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে ভবনের কর্মচারীরা উদ্ধার করে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। রাত আটটার দিকে তিনি সেখানে মারা যান।
ভবনটিতে সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ভবনের ৯ম তলায় আস্তরের কাজ চলছিল। রাকিব ভবনের জানালা দিয়ে ময়লা ফেলতে গিয়ে পড়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই বহুতল ভবনটির কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন ট্রেডার্স। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের মধ্যে কাজ চলছিল। ভবনটির বাইরের কাজ শেষ তাই ‘সেফটি নেট’ খুলে ফেলা হয়েছে।
মো. আজিজ জানান, রাকিবের মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভবনটিতে কর্মরত ফোরম্যানের তত্ত্বাবধানে তাঁর মরদেহ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। আমরা বারবার তাদেরকে যথাযথ সেফটি (নিরাপত্তা) নিশ্চিত করে তারপর কাজ করতে বলি। কিন্তু অনেক সময় এসব কর্মচারীরা মানে না। এ বিষয়ে প্রকল্প অফিস ও প্রশাসন থেকে বারবার তাদের তাগাদা দেওয়া হয়। এরপরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল।’