‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’–এ পুলিশের ভূমিকায় ‘দাদাগিরি’ সৌরভের
Published: 18th, March 2025 GMT
দরজায় টাঙানো কাগজে লেখা ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার: শুট ডে ১’। কক্ষের ভেতরে পুলিশ কর্মকর্তার পোশাক পরা একজন বসে। পরিচালকের কণ্ঠে ‘কাট ইট!’ এমন সময় সেই দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে খুব পরিচিত কণ্ঠের একজন বললেন, ‘বেঙ্গল নিয়ে শো বানাচ্ছ, আর দাদাকে ডাকলে না?’
এটুকুতেই বুঝে যাওয়ার কথা সেই পরিচিত কণ্ঠের মানুষটি কে। সে যা–ই হোক, শুটিংয়ের কলাকুশলীরা তো খুশিতে বাকবাকুম। স্বয়ং নির্মাতা হ্যাট খুলে গলায় শিশুর মতো আবেগ ঢেলে জানতে চাইলেন, ‘দাদা, আপনি কোন চরিত্রে অভিনয় করতে চান?’
দুই হাত একসঙ্গে করে পুলিশের পোশাক পরা সেই ‘দাদা’ এমন ভঙ্গি করলেন যে দেখে বোঝা গেল পুলিশের চরিত্রই তাঁর পছন্দের। ভিডিওটির পরের অংশে দেখা গেল, নির্মাতা দাদাকে বোঝাচ্ছেন তাঁর চরিত্র নিয়ে, ‘আপনি একজন সৎ ও কঠোর পুলিশ কর্মকর্তা। চোখে সেই আগ্রাসন থাকতে হবে।’ আর নির্মাতার সহকারীরা দাদার কাঁধ টিপে দিচ্ছেন এবং পাশেই একজন ডাব নিয়ে বসে। দাদা কথাগুলো শুনছেন এবং মাথা ঝাঁকাচ্ছেন।
আরও পড়ুনপ্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিয়ে জরিমানা গুনলেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার১৬ ঘণ্টা আগেযেহেতু এতক্ষণে ধরেই ফেলেছেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দাদা একজনই এবং সেই দাদা হচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী, তাই পরের চিত্রনাট্য বয়ান করা যাক। দাদার প্রথম শুটের অংশের নাম ‘এক্স কোচ অ্যাঙ্গার, টেক ওয়ান।’ সেখানে দাদাকে খুব দ্রুত নিজের রাগ প্রদর্শন করতে হবে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অধিনায়ক সৌরভ তাঁর আগ্রাসী মেজাজের জন্য পরিচিত হলেও ক্যামেরার সামনে ব্যাপারটা ভেতর থেকে আসছিল না। তখন সৌরভ তাঁর ফেলে আসার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে একটি মুখ স্মরণ করার চেষ্টা করেন, যাঁকে দেখলেই তাঁর মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। ঠিক ধরেছেন। গ্রেগ চ্যাপেল!
২০০৫ সালে ভারতের কোচ হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি। কিন্তু খেলোয়াড়দের সঙ্গে সংঘাত ও ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে সে বছরই এপ্রিলে দায়িত্ব ছাড়েন। চ্যাপেলের সময়ে তাঁর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন সৌরভ। পরিণামে অধিনায়কত্ব হারানোর পাশাপাশি ওয়ানডে ও টেস্ট দল থেকেও বাদ পড়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চ্যাপেলের মুখ মনের ভেতর ভেসে উঠলে সৌরভের ভালো লাগার কথা না।
ভিডিওতে ঘটলও তা–ই। চ্যাপেলের মুখ মনের মধ্যে ভেসে ওঠা এবং সেই কল্পনায় চ্যাপেল তাঁকে ‘হ্যালো মেট’ বলে খিকখিক করে হেসে ওঠামাত্রই সৌরভের ভেতরের সব রাগ–ক্ষোভ যেন বন্যার ঢলের মতো বেরিয়ে এল! এমন এক চিৎকার দিলেন যে সেটা নির্মাতা ‘কাট’ বলার পরই থামল না! ক্যামেরার পেছনে ফিসফিসানি ‘দাদার কী হলো!’
আরও পড়ুনউমরানের এবার আইপিএলেই খেলা হচ্ছে না, কলকাতার বদলি এক নেট বোলার১৭ মার্চ ২০২৫পরের দৃশ্যটি আরও মজার। নির্মাতা সৌরভকে বুঝিয়ে দেন, ‘এ দৃশ্যে অপরাধীকে পিটুনি দিতে হবে।’ তো, অপরাধীর দুই হাত বেঁধে তাঁকে শূন্যে ঝোলানো হয়েছে। সৌরভ হাতে লাঠি নিয়ে অপরাধীর পাশে এমনভাবে দাঁড়ালেন, যেটার সঙ্গে ব্যাটিংয়ে স্ট্রোক খেলার স্টান্সের মিল আছে। এভাবে তিনবার আঘাত করলেন অপরাধীকে, যার প্রথমটি দেখে মনে হবে স্কয়ার কাট, পরেরটি কাভার ড্রাইভ এবং শেষটি পুল শট!
সৌরভও ব্যাটিংয়ের স্ট্রোকের মতো একেকটি আঘাত করার সময় জানতে চাইলেন, ‘কাট মারব?’ ‘কাভার ড্রাইভ?’ ‘পুল?’। অপরাধীকে পিটুনি দেওয়া শেষে সৌরভ নিজের ক্রিকেটীয় সত্তা থেকেই বললেন, ‘পুল তো ভালোই। তবে অফসাইডই বেশি পছন্দের।’
ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অফসাইডে সৌরভের স্ট্রোকমেকিং এতই ভালো ও দৃষ্টিনন্দন ছিল যে তাঁকে ‘গড অব অফসাইড’ও বলা হতো। সে যা–ই হোক, সৌরভ তাঁর অফসাইডপ্রীতি জানানোর পর নির্মাতা বলে ওঠেন, ‘পারফেক্ট দাদা! কিন্তু এগুলো আপনাকে ৮ সেকেন্ডের মধ্যে করতে হবে।’
এইবার সৌরভ পড়লেন বিপদে। জানতে চাইলেন, ‘৮ সেকেন্ডে এত কিছু করব কীভাবে?’ নির্মাতা পুলিশের পোশাকে কলকাতা সিনেমার তারকা জিতের কিছু অ্যাকশন দৃশ্য দেখান। কিন্তু সৌরভ সেসব দৃশ্য দেখে পত্রপাঠ বলে দেন, ‘এসব তো পারব না। আমার জন্য আর কোনো চরিত্র আছে?’ নির্মাতা বলেন, ‘এই সিরিজের মার্কেটিং করবেন নাকি?’ সৌরভ এবার খুশিতে হেসে বলেন, ‘হ্যাঁ।’
এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, এই ভিডিও কিসের। নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’–এর প্রোমো মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। সেই প্রোমোতেই সৌরভকে এভাবে দেখা গেছে। রাজনৈতিক ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার এই সিরিজে ছোট্ট এক ‘ক্যামিও’তে পুলিশের ডিএসপির চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌরভ। নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রোমোটি ছাড়া হয়েছে। এই সিরিজে আরও অভিনয় করছেন কলকাতার সিনেমার কিংবদন্তি প্রসেনজিত চ্যাটার্জি, জিৎ, চিত্রাঙ্গদা সিং, পরমব্রত চ্যাটার্জি ও শাশ্বত চ্যাটার্জি। নীরাজ পাণ্ডের পরিচালনায় সিরিজটি আগামী ২০ মার্চ মুক্তি পাবে।
ভারতীয় টিভি চ্যানেলে ‘দাদাগিরি আনলিমিটেড’ কুইজ অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করে ভীষণ জনপ্রিয়তা কুড়ানো সৌরভ নেটফ্লিক্সের সিরিজে অভিনয় করা নিয়ে বলেছেন, ‘থ্রিলার এবং পুলিশি ড্রামার খুব প্যাশন আছে আমার। খাকি ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে অবশ্যই আমার অন্যতম ফেবারিট। তাই নেটফ্লিক্স আমাকে বলার পর খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টারের নতুন মৌসুমে তাদের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে ছিলাম।’
২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিরিজ খাকি: দ্য বিহার চ্যাপ্টার ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।