ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর রাসেলস ভাইপার সাপও চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের এখানে (সেমিনারে) একটা জিনিস বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। তা হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্নীতি। আমি যখন এ কথাগুলো শুনি, তখন আমার রাসেলস ভাইপার সাপের কথা মনে হয়। শেখ হাসিনা যাওয়ার পর এই সাপটাও চলে গেছে। আমি জানি না বিষয়টা এমন কেন।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ: এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

গত বছর দেশে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে একধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সাপের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সাপ নিয়ে নানা ধরনের প্রচারণা ছিল।

দেশে দুর্নীতি কমছে দাবি করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ পয়সাটয়সা নেয় না। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে যত উপদেষ্টা রয়েছেন, তাঁরা কেউই টাকার দিকে তাকিয়ে নেই। এই মানুষগুলো এখানে টাকার জন্য আসেননি। আমাদের কাজের সম্পর্ক বেশ স্বচ্ছ। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখি। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, এটাও দুর্নীতি কমার একটি লক্ষণ।’

শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, আপনারা জানেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা চুরি হয়ে চলে গেছে। এখন তো দেশ থেকে এই পরিমাণ টাকা চুরি হচ্ছে না। তবে দুর্নীতি শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হওয়া বেশ কঠিন। তিনি আরও বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই উদ্যোগগুলো চালুর কারণে দুর্নীতি কমেছে। সামনে আরও কমবে।’

রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির প্রশাসক মো.

হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বক্তব্য দেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফিন্যান্স) উজমা চৌধুরী, হাতিল কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের নির্বাহী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ, ঢাকা চেম্বারের সাবেক পরিচালক রাশেদুল করিম, বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবীর প্রমুখ।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজারে স্বস্তি আছে। যদিও কিছু পণ্যে অস্বস্তি আছে। মূল সমস্যা ছিল সরবরাহকেন্দ্রিক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে আমরা বাজারে স্বস্তি ফেরানোর কাজটি করেছি। বর্তমানে চালের দামে সমস্যা দেখতে পাচ্ছি।’

স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ থাকলেও সুযোগ অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ বাধ্যতামূলক। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে আত্মস্থ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে, ব্যবসায় কোনো দেশ আমাদের বন্ধু নয়, সবাই প্রতিযোগী। এটা মেনে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ থাকলেও সুযোগ অনেক বেশি।

মূল প্রবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পথ মসৃণ করতে কৌশল তৈরি করেছে সরকার। এখন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে কোথায় কোথায় চ্যালেঞ্জ আসবে তা খুঁজে বের করা দরকার। সুযোগ-সুবিধা আদায়ে সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষির জন্য সংগঠনে আলাদা বিভাগ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে পণ্য রপ্তানিতে কোন দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে কিংবা সরকার কী প্রণোদনা দেবে, এসব বিষয় থেকে ব্যবসায়ীদের বেরিয়ে আসতে হবে।

গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশে এখন প্রতিবছর ২২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। তার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ কোম্পানি যেভাবে বড় হচ্ছে, তা দিয়ে এই বিপুল কর্মসংস্থান সম্ভব না। এ জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের প্রয়োজন হবে। দেশের বিভিন্ন খাতে এফডিআই বিরোধী লবি গড়ে উঠেছিল। সেটার খেসারত এখন আমরা দিচ্ছি।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরবরাহ ও উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশকে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো পণ্য বৈচিত্র্যকরণ। এ ক্ষেত্রে কোন কোন পণ্য ও খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার তা খুঁজে বের করে অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট র রহম ন ব যবস য় এলড স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার শপথ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা যোদ্ধাদের

বিজয়ের মাস ঢাকায় এক হলেন একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধারা; তাঁরা শপথ নিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার।

আজ শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গেরিলা যোদ্ধাদের এই মিলনমেলায় এই বাহিনীর জীবিত সদস্যদের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। দিনভর এই আয়োজন করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী সমন্বয় কমিটি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আলাদা গেরিলা বাহিনী গঠন করে অংশ নিয়েছিলেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা। কয়েক হাজার গেরিলা যোদ্ধার এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বেতিয়ারার যুদ্ধে এই বাহিনীর সদস্যদের আত্মদান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আলোচিত ঘটনা।

স্বাধীনতার পর এই গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন। দেড় যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা করেছিল, তাতে এই বাহিনীর সদস্যদের রাখা হয়নি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শহীদ মিনারে মিলনমেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি এই গেরিলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলেন তিনি।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শনিবার একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর মিলনমেলায় সিপিবির সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সম্পর্কিত নিবন্ধ