সল্ট–কোহলির ব্যাটে উড়ে গেল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা
Published: 23rd, March 2025 GMT
ইডেন গার্ডেন্সে উদ্বোধনী ম্যাচেই হতাশ করলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে বড় ব্যবধানে হেরে আইপিএলের নতুন আসর শুরু করল তারা। ফিল সল্ট ও বিরাট কোহলির দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরিতে ১৭৫ রানের লক্ষ্য সহজেই টপকে যায় বেঙ্গালুরু। মাত্র ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় রজত পতিদারের দল।
টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বেঙ্গালুরু। শুরুতেই বাউন্ডারিতে ইনিংস শুরু করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওপেনার কুইন্টন ডি কক। প্রথমে ক্যাচ মিস হলেও হ্যাজলউডের পরের বলে উইকেটরক্ষক জিতেশ শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ইনিংসের শুরুতেই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে কলকাতা।
তবে সেই চাপ সামাল দেন ওপেনার সুনীল নারিন ও অধিনায়ক রাহানে। শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করলেও পরবর্তীতে দুজনেই হাত খুলে খেলেন। পাওয়ার প্লে শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৬০/১। নবম ওভারে সুয়েশ শর্মার এক ওভারেই তুলে নেন ২২ রান। সেই ওভারেই ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন রাহানে। মাত্র ৯.
তবে দশম ওভারে ম্যাচে ফেরে বেঙ্গালুরু। ৪৪ রান করা সুনীল নারিনকে ফেরান রাসিখ সালাম। পরের ওভারে রাহানেকেও সাজঘরে ফেরান ক্রুণাল পাণ্ডে। রাহানে ৩১ বলে ৫৬ রান করেন, যেখানে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা। দ্রুত দুই সেট ব্যাটার ফিরে যাওয়ায় আবার চাপে পড়ে কলকাতা। এরপর ব্যর্থ হন বেঙ্কটেশ আইয়ার (৭ বলে ৬), রিঙ্কু সিং (১০ বলে ১২) ও আন্দ্রে রাসেল (৪ রান)। এক পর্যায়ে কলকাতার সমর্থকদের মুখেও নেমে আসে হতাশা।
পাঁচ নম্বরে নেমে কিছুটা লড়াই করেন তরুণ ব্যাটার রঘুবংশী। শেষ দিকে ২১ বলে ৩০ রান করে তিনিও ফেরেন যশ দয়ালের বলে। হর্ষিত রানা করেন ৫ রান। ইনিংসের শেষে রমনদীপ সিং (৬*) ও স্পেনসার জনসন (১*) অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭৪ রানে থামে কলকাতার ইনিংস।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন সল্ট ও কোহলি। মাত্র ২২ বলেই গড়েন হাফ সেঞ্চুরির জুটি। পাওয়ার প্লে'তেই তুলে নেন ৮০ রান। দুজনে গড়ে তোলেন ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৩১ বলে ৫৬ রান করে আউট হন সল্ট, ইনিংসে ছিল ৯টি চার ও ২টি ছয়। দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফেরেন দেবদূত পাডিক্কাল (১০)। তবে এরপর অধিনায়ক রজত পতিদার খেলেন ঝোড়ো ইনিংস। মাত্র ১৬ বলে ৩৪ রান করেন ৫টি চার ও ১ ছয়ে। কোহলির সঙ্গে তার জুটি ছিল ৪৪ রানের।
শেষদিকে কোহলি ও লিয়াম লিভিংস্টোন অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে সহজ জয় এনে দেন। কোহলি ৩৬ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন, যেখানে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছয়। লিভিংস্টোন অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে। কলকাতার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। ৪ ওভারে দেন ৫৪ রান, নেন ১ উইকেট। বাকি দুটি উইকেট নেন সুনীল নারিন ও বৈভব অরোরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।