অর্থায়ন বন্ধ, যক্ষ্মার ঝুঁকি বেড়েছে
Published: 24th, March 2025 GMT
দেশে যক্ষ্মার বোঝা অনেক বড়। যক্ষ্মারোগীর ১৭ শতাংশ এখনো শনাক্ত করতে পারে না স্বাস্থ্য বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজে প্রভাব পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি সহায়তা ছাড়াই যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে সাতটি দেশে একই সঙ্গে সাধারণ যক্ষ্মা ও ওষুধপ্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, বাংলাদেশ সেই তালিকায় আছে। অন্য দেশগুলো হচ্ছে অ্যাঙ্গোলা, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি ও ভিয়েতনাম। দীর্ঘদিন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে প্রতিবছর যক্ষ্মায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। গতকাল রোববার প্রথম আলোকে দেওয়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, গত বছর তারা সারা দেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত করতে পেরেছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন ৬৫ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৭ শতাংশ যক্ষ্মারোগী শনাক্তের বাইরে। তাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। তাঁরা যক্ষ্মা ছড়াচ্ছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা, বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিবএ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়া।’ দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পক্ষ থেকে আজ সকালে মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ব্র্যাক সেন্টার ইনে দুটি পৃথক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
আইসিডিডিআরবির কাজ বন্ধসরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, প্রায় আড়াই দশক ধরে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশও (আইসিডিডিআরবি) সরকারি কর্মসূচিতে সহায়তা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়ায় হঠাৎ করেই এর প্রভাব পড়েছে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। আইসিডিডিআরবি ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ করেছে এবং প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা ও কর্মী ছাঁটাই করেছে।
সরকারি ও বেসরকারি সূত্র জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটিতে যক্ষ্মা শনাক্তে সরকারকে সহায়তা করত। তারা শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তেও কাজ করত। এ ছাড়া শ্যামলীর যক্ষ্মা হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগী ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করত। আইসিডিডিআরবি প্রতিটি হাসপাতালে একজন করে মেডিকেল অফিসার দিয়েছিল। এখন এসব কাজ বন্ধ।
একদিকে শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১৭ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে শনাক্তের কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়বে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। এসব করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত না হলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়বে।’
১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে যেকোনো নাগরিকের জন্য যক্ষ্মা শনাক্তের পরীক্ষা, ওষুধ ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের যক্ষ্মা কর্মসূচি।
গতকাল রোববার জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) জুবাইদা নাসরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তামূলক কাজ বন্ধ হওয়ার ফলে কিছু সমস্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। আমরা পরিস্থিতি দ্রুত সামলে নিয়েছি। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা ব্যবস্থাপনায় সরকারি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগিয়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র আইস ড ড আরব পর স থ ত ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।