ঈদযাত্রায় প্রস্তুত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট
Published: 25th, March 2025 GMT
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট। ঈদ মৌসুমে নৌরুট দুইটিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ যানবাহন বৃদ্ধি পায়। ফলে নদী পারাপারে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়।
যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ২৩টি ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘাট কৃর্তপক্ষ। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করায় এবারের ঈদ মৌসুমে নৌরুট দুইটিতে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয় জানায়, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিশ্চিত করতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৭টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ছয়টি ফেরি চলাচল করবে। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগ ট্রাক পারাপার হয়। দুইটি নৌরুটে ঈদের আগে ও পরে ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। তবে, জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করা হবে। ফেরি মেরামতের জন্য পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভাসমান কারখানা মধুমতি প্রস্তুত থাকবে।
আরো পড়ুন:
সমুদ্রগামী ফেরির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ
সস্ত্রীক ছিনতাইকারীর কবলে ফেনী স্টেশন মাস্টার, গ্রেপ্তার ৩
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১১টি রোরো, একটি কেটাইপ, দুইটি ইউটিলিটি, তিনটি ছোট ফেরি চলাচল করবে। এ নৌরুটের চ্যানেলের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। বর্তমান সময়ে ফেরির আকারভেদে পার হতে সময় লাগছে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট।
আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে পাঁচটি বড় ও একটি ছোট ফেরি চলাচল করবে। এই নৌরুটের চ্যানেলের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। একেকটি ফেরি গন্তব্য পৌছাতে সময় নেয় দুই ঘণ্টা।
আরিচা ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থাকা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক ইব্রাহিম খলিল বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পর স্বাভাবিক সময়ে ফেরি পেতে এখন আর তেমন সিরিয়ালে থাকতে হয় না। ঈদ মৌসুমে ভিড় বাড়ায় পারাপারের সময় সিরিয়ালে থাকতে হয়। নাব্য সংকটে ফেরি পারাপারে বেশি সময় লাগে।”
রাজবাড়ীগামী যাত্রী মহিবুল হাসান বলেন, “ফেরি সংকট না হলে নৌরুটে তেমন ভোগান্তি হয় না। আগের তুলনায় নৌরুটে অনেক চাপ কমেছে। ঈদ মৌসুমে ভিড় বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত ফেরির কারণে ভোগান্তি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফেরির যাত্রী পরিবহনে অতিরিক্ত অর্থ আদায় যাতে না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখার জন্য অনুরোধ করছি।”
আরিচা ঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, “আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ঈদের সময় ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ বাড়ে। তবে ছয়টি ফেরি চলাচল করায় তেমন কোনো ভোগান্তি হবে না বলে আশা করছি।”
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম ( বাণিজ্য) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করায় যাত্রীদের ভোগান্তির কোনো শঙ্কা নেই। ঘাট এলাকায় পন্টুন, র্যাম মেরামতসহ সব প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।”
ঢাকা/চন্দন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ট র য় দ লতদ য় ফ র ঘ ট ঈদ উৎসব ঈদ ম স ম প রস ত ত দ লতদ য়
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট
পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।
ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি
ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।
ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’
স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’