ভাঙ্গায় আন্দোলন: দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি
Published: 16th, September 2025 GMT
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের কারণে হঠাৎ করেই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।
একইসঙ্গে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও ঘাট সংকটের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।
আরো পড়ুন:
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে নাব্য সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত
পন্টুন ভেসে গেল পদ্মার স্রোতে, পাটুরিয়ায় ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে এই চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আটকে পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। এছাড়াও অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে যাত্রীবাহী বাসের সারি।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়ায় সাতটি ফেরি ঘাটের মধ্যে ১, ২, ৫ ও ৬ নম্বর ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ফেরি ঘাট দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। পলি জমে ৭ নম্বর ঘাট চ্যানেলে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হওয়ায় গত ২৩ আগস্ট থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া তীব্র স্রোতের কারণে ৪ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ফেরির আঘাতে প্লেট ভেঙে গেছে। ফলে রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে এ ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। এটার মেরামতের কাজ চলছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া ঘাটে শুধু ৩ নম্বর ফেরি ঘাট চালু রয়েছে। পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। সবমিলিয়ে ফেরি পারাপারে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে।
এদিকে, পণ্যবাহী ট্রাকের ফেরিতে উঠতে সময় লেগে যাচ্ছে ১২-১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। যাত্রীবাহী বাসের ফেরিতে উঠতে সময় লাগছে ৩-৪ ঘণ্টা। পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, “ফরিদপুরে চলমান আন্দোলনের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহারকারী যানবাহনের পরিমাণ হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ঘাট সংকট ও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য ঘাট এলাকায় যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এ নৌরুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে।”
ঢাকা/রবিউল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ট র য় দ লতদ য় ফ র ঘ ট দ লতদ য়
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদের তীরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর আদালতে মামলাটি করেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা মামলাটি দায়ের ও আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও মৌজায় ধোপাজান নদের তীরে তাঁর পরিবারের ২ একর ৪০ শতক ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা চলমান। কিন্তু লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং ধোপাজান নদে বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি নিয়ে তাঁর জমি থেকে জোরপূর্বক নদের পাড় কেটে ও ফসলি জমি নষ্ট করে বালু উত্তোলন করেছে।
বাদীর অভিযোগ, ২৭ অক্টোবর রাতে তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লিমপিডের লোকজনকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখেন। বাধা দিলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, আসামিপক্ষ তাঁর জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করেছে। এতে তাঁর জমির একাংশ নদে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত ধোপাজান নদ। ভারত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা এই নদের ইজারা ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। ড্রেজার দিয়ে অবাধ বালু উত্তোলনের ফলে এলাকায় ব্যাপক ভাঙন ও পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ায় সরকার ওই সময় ইজারা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। নদটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন।
ইজারা বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এই নদে প্রকাশ্যে বালু লুট শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসে এখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো ধোপাজান নদ থেকে নানাভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এর মধ্যেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠানটিকে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চলমান কাজে এ বালু ব্যবহার করা হবে। তবে ধোপাজান নদ বিআইডব্লিউটিএর আওতাভুক্ত নয়। এরপর আগস্টে জেলা প্রশাসন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ধোপাজান নদে বিটি বালু নেই, এখানে রয়েছে উন্নতমানের সিলিকা বালু। এ বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং অনুমোদনপ্রক্রিয়াটিও বিধিসম্মত হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর পর থেকেই লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত বুধবার একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
নদের তীরের মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন, নানাভাবে এই বালু তোলা বন্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু ফল হচ্ছে না। এর সঙ্গে বড় বালুখেকোরা জড়িত। তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালীসহ সুবিধাভোগীদের ম্যানেজ করে বালু তুলে বিক্রি করছেন। এই বালু লুট বন্ধ করতে হবে।