বাসে বাড়তি ভাড়া গুনে ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী
Published: 28th, March 2025 GMT
বড় কোম্পানির বাসগুলোর টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। ছোট কোম্পানির বাসগুলোয় আসন ফাঁকা আছে, তবু নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে টিকিটপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি খরচ করে ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, মাজার রোড ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোয় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
ঈদের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। গতকাল বিকেল থেকেই কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বাস কাউন্টার মাস্টাররা জানান, এবার লম্বা ছুটি থাকায় প্রান্তিক জেলাগুলোর যাত্রীরা ধাপে ধাপে রাজধানী ছেড়েছেন।
হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, শাহ ফতেহ আলীর মতো বড় কোম্পানির বাসগুলো এখন আগাম টিকিটের যাত্রী পার করছে। এসব বাসে অগ্রিম টিকিটেও অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ছোট কোম্পানির বাসগুলোয় ডেকে ডেকে যাত্রী নিলেও সেখানেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
গাবতলীর হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারে স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে বাসের জন্য বসে আছেন সৈয়দপুরের মো.
রংপুর যেতে আজ সকালে মো. শাহেদ হোসেন নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী গাবতলী টার্মিনালে আসেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি বাসের কাউন্টার ঘুরেও তিনি টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। মো. শাহেদ হোসেন বলেন, ‘বড় কোম্পানির বাসগুলোতে টিকিট নাই। ছোট কোম্পানির বাসে সিট আছে, কিন্তু তারা ভাড়া কম রাখবে না। সবগুলো বাসে একই রকম ভাড়া চাচ্ছে। রংপুরে নন–এসি বাসের মূল ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা; কিন্তু এখন সেটা ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা রাখছে।’
আজ থেকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটিতে থাকবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তার আগে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি থাকায় মূল ঈদের ছুটি শুরুর আগেই ধাপে ধাপে মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করেন।
তবে শেষ কর্মদিবস থাকায় গতকাল থেকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেড়েছে বলে জানান বাস কাউন্টার মাস্টাররা।
গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার গোলাম মোস্তফা জানান, গতকাল পর্যন্ত যাত্রীর চাপ কিছুটা কম ছিল। কালকের পর থেকে চাপ বেড়েছে। এখন কোনো বাসে সিট নেই। অনেক যাত্রী ফেরত যাচ্ছেন।
আলম এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাসগুলো ফিরতি ট্রিপে ফাঁকা আসন নিয়ে আসছে। যে টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, সেটা আসলে বেশি না। এর চেয়ে কম ভাড়া নিলে ঈদযাত্রায় কোম্পানি পোষাতে পারবে না।
বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও বিষয়গুলো যাত্রীরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করছেন না বলে জানান কর্মরত পুলিশ সদস্যরা।
গাবতলী বাস টার্মিনালের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মানুষ বাড়ি ফিরতে পারলেই খুশি। কন্ট্রোল রুম থেকে আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিকে বেশি নজর রাখছি। কিন্তু কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছে না।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।