বড় কোম্পানির বাসগুলোর টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। ছোট কোম্পানির বাসগুলোয় আসন ফাঁকা আছে, তবু নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে টিকিটপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি খরচ করে ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, মাজার রোড ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোয় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

ঈদের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। গতকাল বিকেল থেকেই কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বাস কাউন্টার মাস্টাররা জানান, এবার লম্বা ছুটি থাকায় প্রান্তিক জেলাগুলোর যাত্রীরা ধাপে ধাপে রাজধানী ছেড়েছেন।

হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, শাহ ফতেহ আলীর মতো বড় কোম্পানির বাসগুলো এখন আগাম টিকিটের যাত্রী পার করছে। এসব বাসে অগ্রিম টিকিটেও অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ছোট কোম্পানির বাসগুলোয় ডেকে ডেকে যাত্রী নিলেও সেখানেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গাবতলীর হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারে স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে বাসের জন্য বসে আছেন সৈয়দপুরের মো.

এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম দুটি টিকিট কেটেছি। তাও দুই টিকিটের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে।’

রংপুর যেতে আজ সকালে মো. শাহেদ হোসেন নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী গাবতলী টার্মিনালে আসেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি বাসের কাউন্টার ঘুরেও তিনি টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। মো. শাহেদ হোসেন বলেন, ‘বড় কোম্পানির বাসগুলোতে টিকিট নাই। ছোট কোম্পানির বাসে সিট আছে, কিন্তু তারা ভাড়া কম রাখবে না। সবগুলো বাসে একই রকম ভাড়া চাচ্ছে। রংপুরে নন–এসি বাসের মূল ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা; কিন্তু এখন সেটা ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা রাখছে।’

আজ থেকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটিতে থাকবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তার আগে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি থাকায় মূল ঈদের ছুটি শুরুর আগেই ধাপে ধাপে মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করেন।

তবে শেষ কর্মদিবস থাকায় গতকাল থেকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেড়েছে বলে জানান বাস কাউন্টার মাস্টাররা।

গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার গোলাম মোস্তফা জানান, গতকাল পর্যন্ত যাত্রীর চাপ কিছুটা কম ছিল। কালকের পর থেকে চাপ বেড়েছে। এখন কোনো বাসে সিট নেই। অনেক যাত্রী ফেরত যাচ্ছেন।

আলম এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাসগুলো ফিরতি ট্রিপে ফাঁকা আসন নিয়ে আসছে। যে টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, সেটা আসলে বেশি না। এর চেয়ে কম ভাড়া নিলে ঈদযাত্রায় কোম্পানি পোষাতে পারবে না।

বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও বিষয়গুলো যাত্রীরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করছেন না বলে জানান কর্মরত পুলিশ সদস্যরা।

গাবতলী বাস টার্মিনালের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মানুষ বাড়ি ফিরতে পারলেই খুশি। কন্ট্রোল রুম থেকে আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিকে বেশি নজর রাখছি। কিন্তু কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল গ বতল

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক

এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?

এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?

অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?

তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।

তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।

এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।

এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক