ঢাকা–বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক নতুন ধাপে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চীন সফরে থাকা অধ্যাপক ইউনূসের শনিবার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা চীনকে আমাদের ভালো বন্ধু হিসেবে দেখি। বিগত বছরগুলোতে আমাদের সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী হয়েছে। আমাদের ব্যবসা–বাণিজ্য অনেক জোরদার হয়েছে। চীনের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা থেকে আমরা উপকৃত হচ্ছি।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চীনের অর্জন দেখে বাংলাদেশের সবাই অনুপ্রাণিত।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে কাজ হলো নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশের মানুষ আশা করে, নিজেদের দেশকে উন্নত করতে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা শিক্ষা নিতে পারে।

দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের অর্জনের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অধিকাংশ দেশ সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের পরিবর্তে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু চীন নিম্ন আয়ের মানুষের প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দেয়। এ কারণে খুব দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচনে চীন অনেক বেশি সফল।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, টানা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। বর্তমানে চীনের প্রায় এক হাজার উদ্যোগ চলমান। যেগুলোতে সাড়ে ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, চীনের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে পারে; যাতে জনগণ উপকৃত হয়।

আরও পড়ুনতিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা৫ ঘণ্টা আগে

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অধ্যাপক ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এবং বিশাল সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে মিলে একটি বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রত্যেকের অংশগ্রহণ থাকবে এমন নতুন অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এটাকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত করতে পারি, যেখানে আমাদের সহযোগিতা কেবল অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা হবে সাংস্কৃতিক।’

আরও পড়ুন২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ-ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি চীনের৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ