মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তেহরান যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে দেশটির ওপর বোমা হামলা চালানো হবে। পাশাপাশি ইরানসহ যেসব দেশ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করবে, তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

গত সপ্তাহে ইরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ট্রাম্প গতকাল রোববার এনবিসি নিউজের কাছে প্রথম মুখ খোলেন। টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন। তবে এর বেশি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যদি তারা কোনো চুক্তি না করে, তাহলে বোমাবর্ষণ হবে। এবার এমন বোমাবর্ষণ হবে, যা তারা আগে কখনো দেখেনি। তিনি আরও বলেন, ‘এমন আশঙ্কাও আছে, যদি তারা চুক্তি না করে, তাহলে আমি তাদের ওপর চার বছর আগের মতোই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব।’

গত বৃহস্পতিবার তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের একটি চিঠির জবাবে ইরান ওমানের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তেহরানের ওপর নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ইরান বলেছে, তাদের নীতি হলো সর্বোচ্চ চাপ ও সামরিক হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় অংশ না নেওয়া।

গতকাল ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান এই নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) সরাসরি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তবে ইরান সব সময় পরোক্ষ আলোচনায় ছিল, এখনো আছে। পরোক্ষ আলোচনা এখনো অব্যাহত থাকতে পারে বলে সর্বোচ্চ নেতাও জোর দিয়েছেন।

এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প রুশ ও ইরানি পণ্যের ক্রেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছেন। তিনি গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার তেল ক্রেতাদের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুমোদন দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের চিঠির জবাব দিয়েছে ইরান২৮ মার্চ ২০২৫

পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে, উচ্চ স্তরের বিশুদ্ধতা পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গোপন এজেন্ডা রয়েছে ইরানের। তবে তেহরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক শক্তির জন্য।

আরও পড়ুনভয় দেখালে আলোচনা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ইরান১০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত দ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ