আগামী ঈদ করবেন আরাকানে, আশা রোহিঙ্গাদের
Published: 31st, March 2025 GMT
দেশব্যাপী ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ। মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব উদযাপন করেছেন রোহিঙ্গারা। তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশুদের আনন্দ চোখে পড়লেও, বড়রা কাটিয়েছেন বিষাদে। তারা আশা করছেন, আগামী ঈদ আরাকানে কাটাবেন।
আজ সোমবার সকালে ৮টার পর উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। তাদের রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের চালানো নির্যাতনের বিভীষিকা আর অভাবের দাপটে এই উৎসবের রঙ সেখানে অনেকটাই বিবর্ণ।
রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন ইমাম ও মুসল্লিরা। মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসলিমরা নির্যাতনের বিচার চেয়ে ও বাংলাদেশে সরকার-জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
এদিকে সম্প্রতি ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া গতকাল সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা জানান ইউনূস।
এ বিষয়ে টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘ঈদ আসলেও আমাদের মাঝে তেমন আনন্দ নেই। কেননা নিজ দেশে ঈদ উদযাপন আর ভিনদেশে ঈদ পালন করা অনেক ভিন্ন। সেদেশে (মিয়ানমারের) আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সেখানে থাকা অবস্থায় ঈদের নামাজ শেষ করে তাদের কবর জিয়ারত করতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না। এর চেয়ে কষ্ট কি আর হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, সেটা শুনে আমাদের মাঝে নিজ দেশে ফেরার স্বপ্ন আলোর মুখ দেখছে বলে আশা করছি। বিশেষ করে ঈদের নামাজে দোয়া চেয়েছি; এ ঈদ যেন শেষ ঈদ হয় এ দেশে (বাংলাদেশ)। আগামীতে যেন আমাদের ঈদ আরাকানে হয়; এমন প্রত্যাশা আমাদের।’
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছিল। পুরানোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
শরণার্থী জীবনে ‘টাকা-পয়সা নাই, চলাফেরার সুযোগ নাই’, মন্তব্য করে মংডু থেকে আসা টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী রশিদ আহমেদ (৭২) বলেন, ‘আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারিনি। কারণ, সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য আমাদের কোনো আনন্দ নেই। কোথাও বের হতে ভয় লাগে। বিশেষ করে; সেদেশে (মিয়ানামারে) আমাদের শৈশবের অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেখানে আছে বাপ-দাদাসহ স্বজনদের কবর।’
আজ ঈদের দিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই সেজেগুজে শিশুরা, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে তারা।
শিশুদের জন্য টেকনাফের লেদা-জাদিমুড়াসহ কয়েকটি জায়গায় নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা বসেছে। এর আয়োজক নুর কামাল বলেন, এই মেলা কমপক্ষে তিন দিন থাকবে। এখানে শিশুরা এসে খুব আনন্দ উপভোগ করছে।
টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, অনেক আনন্দের ঈদ ছিল মিয়ানমারে। কিন্তু বাংলাদেশে সে খুশির ঈদ হয় না। এখানে মেহমান হিসেবে আছি। দেশে (মিয়ানমারে) ঈদ করে মা বাবার কবর জিয়ারত করতে পারতাম, নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারতাম। সেটি এখানে সম্ভব হচ্ছে না। নিজ দেশে চলাচল করতে ভয় ছিল না।
তিনি বলেন, ‘১৪ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতার মাহফিলে প্রধান উপদেষ্টা ড.
রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১৩৫০টি মসজিদ ও ৯৫০টি নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মত্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্টানে (আজ) ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা।
জানতে চাইলে ১৬- এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি কাউসার সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। তবে কেউ যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে না যায়, সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেখানে নজরদারি রাখা হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র আর ক ন কর ছ ন আনন দ উদয প র কবর
এছাড়াও পড়ুন:
দলের প্রতি অনুগত থাকার অঙ্গীকার, জামায়াতে যোগ দিলেন মেজর (অব.) আ
বিএনপির সাবেক নেতা, সাবেক এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলের প্রাথমিক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জামায়াতে যোগ দেন।
মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নীতি ও আদর্শ, দেশপ্রেম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দলটির অবিচল অবস্থানের প্রতি গভীর আস্থা ও সন্তোষ প্রকাশ করেন।
দলটিতে যোগ দিয়ে তিনি ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ, দেশের স্বার্থ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিয়ম-নীতি, আদর্শ, দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকার অঙ্গীকার করেন।
ডা. শফিকুর রহমান এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এবং তার দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করেন।
যোগদান অনুষ্ঠানে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিক। বিএনপিতে থাকা অবস্থায় দলটির বিরুদ্ধে মন্তব্য করাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি আলোচিত হন।
বিএনপি থেকে দুইবার কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//