Samakal:
2025-08-01@21:08:04 GMT

ঈদে ভালো কাজ করি

Published: 31st, March 2025 GMT

ঈদে ভালো কাজ করি

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। ধর্মীয় এই উৎসবে বিশেষত ঈদুল ফিতর, যা রোজার ঈদ নামে সমধিক পরিচিত এই ঈদে যাদের পক্ষে সম্ভব পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। এর খানিকটা ইতিহাস এখানে তুলে ধরা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে বাঙালির শিক্ষা ও চাকরির প্রধান কেন্দ্র ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহর। আইন পেশায় যারা নিয়োজিত ছিলেন, তারা প্র্যাকটিস করতেন কলকাতা হাইকোর্টে। শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় চাকরিজীবী, পেশাজীবী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দলে দলে ফিরতেন নিজ নিজ গ্রামে। এক্ষেত্রে মুসলিমরা ফিরে আসতেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ে। এখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। দুই ঈদের সময় ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। ঢাকায় বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে অনেকের সঙ্গে বাবা-মা থাকেন না। বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে তারা ছুটে যান গ্রামে। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি ১৫ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু ঢাকা ছেড়ে যাবে। গণমাধ্যমগুলো আরও জানিয়েছে, এর বাইরেও এক জেলা থেকে অপর জেলায় বা এক স্থান থেকে অপর স্থানে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে আরও ৩ কোটি ৮৫ লাখ লোক। সংখ্যায় হেরফেরও হতে পারে। পাঁচ কোটি লোক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, নাকি চার কোটি যায়- এ নিয়ে আলোচনা অনর্থক। বরং এটা বলা যায় যে, ঈদ যাত্রা অনেকের জন্য সহজ হয় না। রাজনৈতিক ভয়-শঙ্কা, রাস্তার ঝক্কি-ঝামেলা ইত্যাদি নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তারা নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যান এবং আবার ফিরে আসেন। এই যাওয়া-আসার মধ্যে অনেক ভালো দিক রয়েছে। এতে শুধু পারিবারিক বন্ধন যে সুদৃঢ় হয়, তা নয়।  এর তাৎপর্য বহুমাত্রিক। 

বক্ষমাণ নিবন্ধে অল্প সময়ের জন্য ঢাকা ত্যাগী এবং অন্যান্য লোকজনের উদ্দেশ্যে কিছু নিবেদন রাখতে চাই। আসুন আমরা এই ঈদে কয়েকটি ভালো কাজ করার মনস্থির করি। পেশাগত জীবনে আমি গণমাধ্যম ও তথ্য নিয়ে কাজ করি, তাই তথ্য-অপতথ্যের বয়ান দিয়ে শুরু করা যাক। অবাধ তথ্য প্রবাহের এই কালে ‘তথ্য’ অনেক বড় শক্তি। একটি সঠিক তথ্য যেমন একটি জাতিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে একতাবদ্ধ রাখতে পারে। তেমনিভাবে একটি ভুল তথ্য কোনো একটি জাতি-গোষ্ঠীকে ভেঙে দিতে পারে। মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা আমাদেরকে সারাক্ষণ তথ্যের ভেতর ধরে রাখছে। বর্তমানে দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি। এই সংখ্যাটি পুরনো, ২০২৩ সালের। বর্তমানে এই সংখ্যা নিশ্চয় বেড়েছে। এই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭০ বা তারও বেশি পরিবার অন্তত একটি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে। এ ধরনের ফোন দিয়ে ভিডিও কল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত থাকা, ইউটিউব, বিনোদন কনটেন্ট, কোনো বিষয়ে আলোচনা শোনা, পড়াশোনা করা ইত্যাদি সহজতর হয়েছে। এই সহজতর হওয়ার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম প্লাটফর্ম ফেইসবুকে সঠিক-বেঠিক নানা তথ্যের ছড়াছড়ি নাগরিকদের প্রায়শই চিন্তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই যে কোনো বিষয় বা যে কেউ ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। সেটা কী মন্দ বা ভালো যে কোনো কাজ দিয়ে। 

বিগত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান উত্তর ‘গুজব’ সারা দেশ ছেয়ে গেছে। একের পর এক নানা গুজবে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ফারসি শব্দ ‘গুজ’ থেকে আগত এই গুজবের অপ্রমাণিত এবং ভিত্তিহীন তথ্যে নিজেকে যুক্ত করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, গুজবের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করা। গুজবের তথ্যে বিশ্বাস স্থাপন না করে তা যাচাই করতে হবে। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলোতে (সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সন কিংবা টেলিভিশনের সংবাদ) শোনা বা প্রাপ্ত তথ্য অনুসন্ধান করতে হবে। এটি একটি তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া। এই যাচাই প্রক্রিয়াটি যারা অল্প সময়ের জন্য গ্রামে গিয়েছেন, তাঁরা গ্রামে বসবাসকারী লোকজনের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন এবং তাদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহী করতে পারেন। গুজব বা অপতথ্যে বিশ্বাস না করার পেছনে এটি হবে ঈদে একটি ভালো কাজ। ঈদের আগে ২৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস গুজবের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘গুজব হলো জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার। গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। গুজবের মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা। আমরা তাকে ব্যর্থ হতে দেব না।’ 

তিনি আরও বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের যেন এক মহোৎসব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিনব সব প্রক্রিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব প্রচারকারীদের অভিনব কৌশল আপনি বুঝতেই পারছেন না কখন তাদের খেলায় আপনি পুতুল হয়ে গেছেন। আমাদের সচেতনতা এবং সামগ্রিক ঐক্য দিয়েই এই গুজবকে রুখতে হবে।’ 

অধ্যাপক ড. ইউনূসের ভাষণের এক দিন আগে সেনাপ্রধান তার অফিসার্স অ্যাড্রেসে অনুরূপ কথা বলেছেন। গুজবে বিশ্বাস এবং শেয়ার করার বিষয়ে সর্তক করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে একটি চমৎকার গ্রাফিতি  চোখে পড়ে। এতে বলা হয়েছে ‘করার আগে শেয়ার, ভাবুন দশবার-গুজবে সব ছারখার’। এই গ্রাফিতির শিল্পীর চিন্তার মান প্রশংসার দাবি রাখে।  

সংস্কৃতি প্রবাহমান। মানুষ এক স্থান হতে অন্য স্থানে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির প্রবাহমানতা ঘটে। ঈদে আমরা কিছু শহুরে সংস্কৃতি গ্রামে ছড়িয়ে দিতে পারি আবার সেখান থেকে কিছু ধারণও করতে পারি। কালের পরিক্রমায় এক সংস্কৃতি আরেক সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে কিছুটা গ্রহণ করে, আবার কিছুটা বর্জন করে। একাধিক সংস্কৃতির এই মেলামেশা, গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়েই সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া ঘটে। এতে সংস্কৃতির বিবর্তনও সাধিত হয়। শহরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা অনেক টিউশন ফি দিয়ে ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। অনেকে বাসায় ভালো মানের হাউজ টিউটর রাখে। নিত্য-নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে শহরের শিক্ষার্থীদের সংযোগ ও পরিচয় বেশি ঘটে। বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামে যাওয়া এই শিক্ষার্থীরা গ্রামের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানোন্নয়নে পরামর্শ ও দিক নিদের্শনা দিতে পারেন। ঈদে এটি হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কাজ। প্রত্যুষে বা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা এবং রাত নয়টা বা দশটার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া গ্রামের লোকজনের অভ্যাস। তাঁরা সন্ধ্যার পর পরই রাতের খাবারও খেয়ে ফেলেন। ঢাকায় বসবাসকারী লোকজন এই অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারেন। খুব সকালে যিনি ঘুম থেকে ওঠেন, কাজের জন্য তাঁর কাছে দিনটি অনেক বড় মনে হবে। এই অভ্যাস গড়ে তোলা ঈদে ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সন্ধ্যার পর পরই রাতে খাবার খাওয়া এবং খাওয়া কিছুটা হজম করে ঘুমাতে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। 

বর্তমানে অবশ্য গ্রাম বলতে আমাদের চোখের সামনে যে অবয়ব ভেসে উঠে, গ্রাম সেই অবস্থায় নেই। সুযোগ-সুবিধাসহ গ্রামের পরিবেশ শহরের রূপ ধারণ করছে। প্রতি ঘড়ে বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রিক ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বা উপভোগের জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি কারণে গ্রামীণ জীবন-যাপনে আমুল পরিবর্তন এসেছে। এরপরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বয়স্ক লোকেরা এখনও সেকেলের জীবন-যাপন করে। এই বয়স্ক লোকজনকে সম্মান করা এবং তাদের জীবনাচার জানার মধ্য দিয়ে মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। এতে বয়স্ক লোকজনও সম্মানিত বোধ করবেন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে উত্তর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ নাজুক হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থায় পালাক্রমে দলবদ্ধ হয়ে পাহারা দেওয়ার একটা আপতকালীন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য উত্তরণ হয়নি। এর কারণ অবশ্য সকলের জানা। পুলিশের মনোবল ফিরে পেতে এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জনে সকলেরই একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে পুলিশের কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, দিন শেষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকাই অগ্রগণ্য। শহরে ও গ্রামে ডাকাতি ও ছিনতাই এখনও হচ্ছে। গ্রামে অবস্থানকালে নিজেরা সাবধান ও সর্তক থাকার পাশাপাশি গ্রামের লোকজনকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। 

নিবন্ধটি শেষ করি ঈদ যাত্রায় রাজনৈতিক ডামাডোলের স্মৃতিচারণ করে। কেউ কেউ বাঙালিকে বিস্মৃতি পরায়ণ বললেও আমি স্মরণ করতে চাই যে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হলে বিরোধী দল বিএনপির নানা ধরনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত হয়েছে। সেই সময় বিএনপি আহূত হরতাল, রোড মার্চ, ঢাকা ঘেরাও ইত্যাদির মধ্যদিয়ে রাজনীতি ঘুরপাক খেয়েছে। আন্দোলন ঈদের আগে, না ঈদের পরে-এই নিয়ে বাহাস, বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকারের পাল্টা ব্যবস্থাতে লোকজনের আসা-যাওয়ার চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এই অবস্থার এক ধরনের উত্তরণ ঘটেছে। আওয়ামী লীগের প্রধান দেশ ছেড়ে চলে গেছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চুপসে গেছে। ঈদের আগের-পরের আন্দোলন নিয়ে ভয়, শঙ্কা উবে গেছে। রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে পড়ে অনেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। আসলে রাজনৈতিক বিভাজন থাকা স্বাভাবিক। তবে এই বিভাজন কেন্দ্রিক প্রতিপক্ষকে বিনাস করার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যথায়, পূর্বসূরিদের পথে হাঁটছেন বলে গণ্য হবে। দেশটা আমাদের নতুন করে গড়তে হবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা যদি একযোগে চলতে পারি, চিহ্নিত অপরাধী ব্যতীত পরস্পরের প্রতি সহনশীল হই, তবে দ্রুতই আমরা প্রত্যাশিত লক্ষ্য মাত্রা ছুঁতে পারি। 

ড. আহমেদ সুমন, গবেষক ও লেখক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবহ র ল কজন র র জন য ক জ কর আম দ র পর স থ অবস থ ন করত সরক র বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ