স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন বাবা-মায়েরা
Published: 1st, April 2025 GMT
গোলাপী-নীল-কমলা রঙের স্কুলব্যাগগুলো পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। চূর্ণ-বিচূর্ণ ইটের সঙ্গে মিশে গেছে ভাঙা চেয়ার, টেবিল। পাশেই স্পাইডারম্যান খেলনা আর অক্ষর সাজানোর বর্ণমালাগুলো। প্রায় ১৫টি শিশুর স্কুলব্যাগ ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এরই মাঝে ছোট সন্তানদের খুঁজছেন, নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা। কাঁদতে কাঁদতে রাত পর্যন্ত সন্তানদের নাম ধরে ডাকতে দেখা গেছে। তিন দিন পর সোমবার ঘটনাস্থলটি নীরব। স্থানীয় লোকদের মুখে শোকের ছাপ।
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে বিধস্ত একটি প্রাক প্রাথমিক স্কুলের চিত্র এটি। মান্দালয় থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কিয়ুকসে শহরের একটি স্কুল। শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি।
স্থানীয়রা বলছেন- পুরো শহরের লোকজন উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে এসেছিল এই স্কুলে। শুক্রবার বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে। তারা বলছেন, ওই দিন স্কুলে দুই থেকে সাত বছর বয়সী প্রায় ৭০ জন শিশু আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু এখন ইট, সিমেন্ট ও লোহার রডের স্তূপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ১২ জন শিশু ও একজন শিক্ষক মারা গেছেন। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস- সংখ্যাটি কমপক্ষে ৪০ জন হবে। সেখানকার বাসিন্দা ও অভিভাবকদের চোখেমুখে হতাশা।
৭১ বছর বয়সী কিউয়ে নাইইন স্কুলটির ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। পাঁচ বছর বয়সী নাতনি থেট হটার সানের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পরিবার। তিনি জানান, ভয়াবহ ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সময় সানের মা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি দৌড়ে স্কুলে যান, কিন্তু ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর ছোট্ট শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, আমরা আমাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি, মানে এক টুকরো অবস্থায়।’
এমন অবস্থা মিয়ানমারের আরও অনেক জায়গায়। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- উদ্ধার ও চিকিৎসা তৎপরতা যথেষ্ট নয়। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। সাহায্যকারী সংস্থাগুলো মিয়ানমারে মানবিক সংকটের আরও অবনতির ব্যাপারে সতর্ক করছে। হাসপাতালগুলোর অনেক ক্ষতি হয়েছে।
মান্দালয় থেকে বিবিসি বার্মিজের রিপোর্টার হতেত নাইং জাও-এর বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা দেখেছি, সেটি হলো সরকারি কর্মচারীদের একটি আবাসিক এলাকা। পুরো নিচতলাটি ধসে পড়েছে, যার উপরে আরও তিনটি তলা এখনও দাঁড়িয়ে। ধ্বংসস্তূপে রক্তের দাগ। তীব্র দুর্গন্ধ থেকে বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে অনেক লোক মারা গেছে, কিন্তু উদ্ধার কাজের কোনো চিহ্ন নেই। একদল পুলিশ আসবাবপত্র ও গৃহস্থালীর জিনিসপত্র ট্রাকে ভরছিল। মনে হচ্ছিল, তারা এখনও ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার আমাদের সাক্ষাৎকার দেননি, যদিও কিছুক্ষণের জন্য ভিডিও করার অনুমতি দিয়েছিল। আমরা স্থানীয় লোকদের শোকাহত ও নিশ্চুপ অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলাম। সামরিক সরকারের ভয়ে তারা মিডিয়ার সঙ্গে হয়তো কথা বলতে চাইছিল না।
হতেত নাইং জাও বলেন, আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচে কতজন লোক থাকতে পারে? তাদের মধ্যে কেউ কি এখনও বেঁচে থাকতে পারে? কেন কোনো উদ্ধারকাজ করা হয়নি, এমনকি মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়নি কেন?
মিয়ানমারের রাজধানীর একটি হাসপাতালের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি, যা এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের জরুরি কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়েছে। প্রবেশপথে, ইংরেজিতে ‘জরুরি বিভাগ’ লেখা একটি সাইনবোর্ড মাটিতে পড়েছিল। বাইরে ছয়টি সামরিক চিকিৎসা ট্রাক এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু, যেখানে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তীব্র গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য তাঁবুগুলোতে পানি ছিটানো হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, সেখানে প্রায় ২০০ জন আহত ব্যক্তি ছিলেন, যাদের কারও মাথা রক্তাক্ত, কারও হাত-পা ভাঙা।
হতেত নাইং জাও- এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা একজন কর্মকর্তাকে জরুরি অবস্থার সময় কাজে না আসা কর্মীদের তিরস্কার করতে দেখলাম। আমি বুঝতে পারলাম লোকটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড.
শহরে ঢোকার পথে, মহাসড়কের পাশে গাছের নিচে মানুষ দলবেঁধে বসেছিল প্রচণ্ড রোদ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য। এখন বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম সময়। তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু আফটারশকের (ভূকম্প পরবর্তী কম্পন) কারণে তারা ভবনের ভেতরে থাকতে ভয় পাচ্ছিল।
প্রতিবেদক বলেন, আমরা রোববার ভোর ৪টায় ইয়াঙ্গুন থেকে ভূমিকম্প অঞ্চলে যাত্রা শুরু করেছিলাম যা মান্দালয় থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। রাস্তায় আলো ছিল না। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় গাড়ি চালানোর পর আমরা কমলা রঙের পোশাক পরা প্রায় ২০ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দলকে দেখতে পেলাম, যাদের জ্যাকেটের ওপর লোগো ছিল যাতে লেখা- তারা হংকং থেকে এসেছেন। আমরা উত্তর দিকে গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় ফাটল দেখতে শুরু করি।
সাধারণত এই রুটে বেশ কয়েকটি চেকপয়েন্ট থাকে, কিন্তু আমরা ১৮৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি চেকপয়েন্ট দেখতে পাই। একজন পুলিশ অফিসার আমাদের জানান, সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে সামনের রাস্তা বন্ধ। তিনি আমাদের একটি বিকল্প পথ দেখিয়ে দিলেন। আমরা আশা করেছিলাম, রোববার রাতের মধ্যে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে পৌঁছাব। কিন্তু সেই গতি পরিবর্তন এবং গরমে আমাদের গাড়ির সমস্যা হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। একদিন পর, আমরা অবশেষে শহরে পৌঁছে যাই। শহরটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে আছে, রাস্তার বাতি জ্বলছে না। ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই। সকাল হলে এখানে কী পাব তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ন হত ভ ম কম প র জন য আম দ র র একট সবচ য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদীর উপর গুলির প্রতিবাদে না’গঞ্জ মহানগর ছাত্র শিবিরের বিক্ষোভ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদীর উপর গুলি করে টার্গেট কিলিংয়ের চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্র শিবির। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি হাফেজ ইসমাইল এক তাৎক্ষণিক বক্তব্যে বলেন, “ওসমান হাদীর উপর গুলি করার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হলো যে বিগত দিনের আওয়ামী লীগ এবং তার দোসররা এখনও জাগ্রত আছে। আমরা এই ইন্টেরিম সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নিকট এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “বিগত আমলের নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী ক্যাডার শামীম ওসমানরা এখনও চক্রান্ত করছে। আমরা এখন আর ঘুমিয়ে থাকব না। ওসমান হাদী আমাদের আন্দোলনের ভাই।”
হাফেজ ইসমাইল আহত ওসমান হাদীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, “আল্লাহ যেনো তাকে অচিরেই সুস্থ করে দেন, এই দোয়া করি।”
মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি হাফেজ মো ইসমাইলের সভাপতিত্বে সেক্রেটারি অমিত হাসানের সঞ্চালনায় এসময় বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি হাফেজ কাউসার ইসলাম, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক আমজাদ হোসেন রাজু, অর্থ সম্পাদক রায়হান বিন রফিক, শিক্ষা সম্পাদক কামারুল ইসলাম, সমাজসেবা সম্পাদক হেলাল উদ্দিন প্রমূখ।
পরিশেষে, আহত নেতার জন্য বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি হাফেজ ইসমাইল।