জঞ্জালে ভরা বেড়ার হুরাসাগর নদের পাড় থেকে বিরক্তি নিয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা
Published: 5th, April 2025 GMT
পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদের পাড়ের পোর্ট এলাকাটি বেড়াবাসীর কাছে দর্শনীয় একটি স্থান। ঈদ-পূজা-পার্বণে সেখানে মানুষের ঢল নামে। কিন্তু ময়লা-আবর্জনার কারণে এবার স্থানটি ঘুরতে গিয়ে বিরক্তি নিয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা। এলাকাটি পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব বেড়া পৌর কর্তৃপক্ষের হলেও দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে তাদের কোনো নজর নেই।
পোর্ট এলাকাটি আসলে হুরাসাগর নদের পাড়ে অবস্থিত পরিত্যক্ত একটি বিশাল নৌঘাট। বেড়া নৌবন্দর পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে বেড়া পৌরসভার ডাকবাংলোর পাশে নৌঘাটটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জেলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ-সংলগ্ন নৌঘাটটি লম্বায় ২৭৫ মিটার। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই পাশে ১০০ মিটার করে বাঁধানো হয় সিঁড়ি। নানা জটিলতায় নৌবন্দর পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পটি বাতিল হলে ঘাটটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় এলাকাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়। সবার কাছে জায়গাটি পোর্ট এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভরা বর্ষায় হুরাসাগর যখন পানিতে টইটম্বুর থাকে, তখন নৌঘাটের যেকোনো স্থানে দাঁড়িয়ে ঘুরতে আসা লোকজনের কাছে সাগর বলে মনে হয়। এ জন্য বর্ষায় দর্শনার্থীর ভিড় বেশি হয়ে থাকে।
আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পোর্ট এলাকার সামনের দিকে সড়কের পাশে সিঁড়ির ওপরে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান বসেছে। ব্যবসায়ীরা দোকানের আশপাশের কিছু অংশ নিজেরা পরিষ্কার করেছেন। বাকি বেশির ভাগ জায়গা ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। বেড়াতে আসা লোকজনের বসার সিঁড়ির বেশির ভাগ জায়গায় খড়ের পালা, ময়লা-আবর্জনা আর গোবরের ঘুঁটে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।
পোর্ট এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আগের বছরগুলোতে ঈদের দিন থেকে শুরু করে অন্তত সাত দিন এখানে কয়েক হাজার লোক বেড়াতে আসতেন। কিন্তু এবার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে ঈদের পরদিন থেকেই ভিড় কমে গেছে। এতে বেচাকেনাও কমে গেছে। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকাটি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু তারা পরিষ্কার করে না।
ঈদের দিন থেকে অস্থায়ী ফুচকার দোকান বসিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেড়াতে আসা লোকজনের বসার জায়গাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভইর্যা আছে। আমরা (ব্যবসায়ীরা) যতটুকু পারিছি, পরিষ্কার করিছি। তাতেও মানুষের মন ভরতেছে না। তাই এবার বেচাকেনাও কম।’
আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় মুখ করে আত্মীয়দের নিয়ে পোর্ট এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে সবাই খুব হতাশ হয়েছেন। ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি।
বেড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজুল আলম বলেন, পোর্ট এলাকা জঞ্জালমুক্ত ও পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকসংকটের কারণে আপাতত কাজটি করতে দেরি হচ্ছে। আশা করছেন, দ্রুত শ্রমিক নিয়ে এলাকাটি পরিচ্ছন্ন করতে পারবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ট এল ক এল ক ট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে ‘সম্ভাব্য অবৈধ মৃত্যুর তদন্তসংক্রান্ত মিনেসোটা নীতিমালা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ আয়োজনে ৩০ ও ৩১ জুলাই ঢাকার সিআইডি সদর দপ্তরে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সিআইডির প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্লাহ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিআইডি এখন একটি আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠছে। মানবাধিকার রক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রমাণনির্ভর নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক কর্মশালা আমাদের সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা ইচ্ছামতো মৃত্যুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিন্জ। তিনি বলেন, মিনেসোটা নীতিমালা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, যা সন্দেহজনক মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। উপস্থাপনায় তিনি লিবিয়া ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদাহরণ তুলে ধরেন।
কর্মশালার শুরুতে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন দেশের ডিএনএ ও ফরেনসিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, চিকিৎসক ও ফরেনসিক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি ও অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।
আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মৃতদেহ শনাক্তকরণ (দুর্যোগে নিহত ব্যক্তি শনাক্তকরণ), নিরপেক্ষ ফরেনসিক প্রতিবেদন তৈরির কৌশল, মানবাধিকার সংরক্ষণে তদন্তকারীদের নৈতিক ও পেশাগত দিকনির্দেশনা এবং বাস্তব ক্ষেত্রভিত্তিক কেস স্টাডি উপস্থাপন।
বিশেষ অধিবেশন পরিচালনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ আরা, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জান্নাতুল হাসান এবং সিআইডির ডিএনএ বিশ্লেষক আহমেদ ফেরদৌস। তাঁদের আলোচনায় জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জও উঠে আসে।
সমাপনী দিনে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের তদন্তপ্রক্রিয়াকে আরও মানবিক, কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। সিআইডির প্রধান ভবিষ্যতে ফরেনসিক সক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে মরিস টিডবল-বিন্জ বলেন, আইনবহির্ভূত মৃত্যুর তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রাম্যমাণ ডিএনএ পরীক্ষাগার, ঘটনাস্থলে মরদেহ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।