পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদের পাড়ের পোর্ট এলাকাটি বেড়াবাসীর কাছে দর্শনীয় একটি স্থান। ঈদ-পূজা-পার্বণে সেখানে মানুষের ঢল নামে। কিন্তু ময়লা-আবর্জনার কারণে এবার স্থানটি ঘুরতে গিয়ে বিরক্তি নিয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা। এলাকাটি পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব বেড়া পৌর কর্তৃপক্ষের হলেও দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে তাদের কোনো নজর নেই।

পোর্ট এলাকাটি আসলে হুরাসাগর নদের পাড়ে অবস্থিত পরিত্যক্ত একটি বিশাল নৌঘাট। বেড়া নৌবন্দর পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে বেড়া পৌরসভার ডাকবাংলোর পাশে নৌঘাটটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জেলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ-সংলগ্ন নৌঘাটটি লম্বায় ২৭৫ মিটার। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই পাশে ১০০ মিটার করে বাঁধানো হয় সিঁড়ি। নানা জটিলতায় নৌবন্দর পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পটি বাতিল হলে ঘাটটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় এলাকাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়। সবার কাছে জায়গাটি পোর্ট এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভরা বর্ষায় হুরাসাগর যখন পানিতে টইটম্বুর থাকে, তখন নৌঘাটের যেকোনো স্থানে দাঁড়িয়ে ঘুরতে আসা লোকজনের কাছে সাগর বলে মনে হয়। এ জন্য বর্ষায় দর্শনার্থীর ভিড় বেশি হয়ে থাকে।

আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পোর্ট এলাকার সামনের দিকে সড়কের পাশে সিঁড়ির ওপরে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান বসেছে। ব্যবসায়ীরা দোকানের আশপাশের কিছু অংশ নিজেরা পরিষ্কার করেছেন। বাকি বেশির ভাগ জায়গা ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। বেড়াতে আসা লোকজনের বসার সিঁড়ির বেশির ভাগ জায়গায় খড়ের পালা, ময়লা-আবর্জনা আর গোবরের ঘুঁটে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।

পোর্ট এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আগের বছরগুলোতে ঈদের দিন থেকে শুরু করে অন্তত সাত দিন এখানে কয়েক হাজার লোক বেড়াতে আসতেন। কিন্তু এবার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে ঈদের পরদিন থেকেই ভিড় কমে গেছে। এতে বেচাকেনাও কমে গেছে। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকাটি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু তারা পরিষ্কার করে না।

ঈদের দিন থেকে অস্থায়ী ফুচকার দোকান বসিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেড়াতে আসা লোকজনের বসার জায়গাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভইর‍্যা আছে। আমরা (ব্যবসায়ীরা) যতটুকু পারিছি, পরিষ্কার করিছি। তাতেও মানুষের মন ভরতেছে না। তাই এবার বেচাকেনাও কম।’

আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় মুখ করে আত্মীয়দের নিয়ে পোর্ট এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে সবাই খুব হতাশ হয়েছেন। ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি।

বেড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজুল আলম বলেন, পোর্ট এলাকা জঞ্জালমুক্ত ও পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকসংকটের কারণে আপাতত কাজটি করতে দেরি হচ্ছে। আশা করছেন, দ্রুত শ্রমিক নিয়ে এলাকাটি পরিচ্ছন্ন করতে পারবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ট এল ক এল ক ট ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে

দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্‌-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনাপুর-নোবিপ্রবি সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণে অংশীজন সভা
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
  • শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: শ্রম উপদেষ্টা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে