পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে তাদের প্রধান কার্যালয়, কারখানা প্রাঙ্গণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্থান সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি ডিএসইর কোম্পানিগুলোর পরিদর্শনের অনুমতি চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ডিএসইকে কোম্পানিগুলোর কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করার অনুমতি প্রদান করেছে বিএসইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্র রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কোম্পানিগুলো হলো- অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কৃষিবিদ সিড লিমিটেড, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল পিএলসি, রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিচ হ্যাচারি লিমিটেড, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ফু-ওয়াং সিরামিক লিমিটেড।

এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বেশ নাজুক। এর তিনটি কোম্পানি সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা দিতে পারেনি।

পরিদর্শনের অনুমতি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, কৃষিবিদ সিড ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল পিএলসি ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, বিচ-হ্যাচারি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ০.

১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ফু-ওয়াং সিরামিক ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করেছে। আর সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, রিং সাইন টেক্সটাইল ও গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল।

জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না। কোনো কোনোটি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে না এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বিনিয়োগকারীদের বিতরণ করছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানির উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) নিয়মিত করছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানি যথাসময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানাচ্ছে না।

২০২৩ সাল থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় ডিএসই। ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর অনুমতি চেয়ে বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছিল ডিএসই। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি ৩১টি কোম্পানি পরিদর্শনের জন্য ডিএসইকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আরো ২৩টি কোম্পানির সরেজমিন পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। ডিএসইর চিঠির প্রেক্ষিতেই দুই দফায় ৫৪টি কোম্পানি সার্বিক অবস্থা দেখার অনুমতি পেয়েছিল ডিএসই।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিচ হ্যাচারি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, ফু-ওয়াং সিরামিক ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে, রিং সাইন টেক্সটাইল ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে এবং গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। আর এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কোনো ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়নি। তাই কৃষিবিদ সিডের কোনো ক্যাটাগরিতে নেই।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, কারখানা প্রাঙ্গণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্থান সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ডিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, কারখানা প্রাঙ্গণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্থান পরিদর্শন করার অনুমতি প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ৪ মার্চ ডিএসইর পরিদর্শন দল সরেজমিন গিয়ে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের কারখানা বন্ধ পায়। এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিদর্শন দল সরেজমিন গিয়ে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিংস মিলস লিমিটেডের কারখানাও বন্ধ পায়। এদিকে, গত বছরের ২২ অক্টোবর তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েও বন্ধ পায় ডিএসই। কোম্পানিগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য কারখানা পরিদর্শনে যান ডিএসই’র কর্মকর্তারা। এসব কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসই।

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র জ ব এসইস র ন র জন য ড এসইর ড এসই অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগে বিশেষ কর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসির তাৎক্ষণিক কর্মপরিকল্পনা’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আস্থা বাড়াতে  ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সূচক পতনের কারণ খুঁজতে যেসব শেয়ারদরের ওঠা-নাম সূচকে বেশি প্রভাব ফেলছে, সেগুলোর লেনদেনে নজদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। 

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত, বহুজাতিক, বস্ত্র ও ওষুধ খাতের লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহ দিতে কর ছাড়, ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে সীমিত করা এবং শেয়ারবাজারকে বিকল্প অর্থায়নের উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর বাইরে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিএসইসির সমন্বয় বাড়ানো, আসন্ন বাজেটে লভ্যাংশ ও বিনিয়োগের ওপর কর ছাড় সুবিধা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে বিএসইসি। 

শেয়ারবাজার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে টকশো এবং বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করে বার্তা দেওয়া হবে।

কমিশন আশা করছে, এসব পদক্ষেপ এবং কর্মপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং বাজারে স্থিতিশীল হবে।

এদিন রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিএসইসি কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ, যুগ্ম সচিব ড. দেলোয়ার হোসেন, শেয়ারবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধি এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকদের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

চলতি এপ্রিলে লাগাতার দরপতনের পরও বিএসইসির নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে কিছু বিনিয়োগকারী রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করছেন। তারা সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এ পদে ‘অযোগ্য’ এমন অভিযোগ করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।

সরকারি একটি সংস্থার চাপে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন- এমন গুজবে রোববার পতনের ধারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শেয়ারবাজার। পতন করছেন না- এমন খবরে ফের দরপতন শুরু হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও এফআইডির সচিব বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। 

বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। বৈঠকের পরই বিএসইসির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিছু জরুরি কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
  • কর্মীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানালেন রাশেদ মাকসুদ
  • ২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিএসইসির আদেশ জারি
  • ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে: বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে
  • চার মাস পর লেনদেন ৩শ কোটির নিচে
  • বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার আহ্বান 
  • পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
  • অস্বাভাবিক বাড়ছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের শেয়ার দর, তদন্তের নির্দেশ