১০ কোম্পানি পরিদর্শনে বিএসইসির অনুমতি পেল ডিএসই
Published: 6th, April 2025 GMT
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে তাদের প্রধান কার্যালয়, কারখানা প্রাঙ্গণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্থান সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি ডিএসইর কোম্পানিগুলোর পরিদর্শনের অনুমতি চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ডিএসইকে কোম্পানিগুলোর কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করার অনুমতি প্রদান করেছে বিএসইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্র রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোম্পানিগুলো হলো- অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কৃষিবিদ সিড লিমিটেড, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল পিএলসি, রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিচ হ্যাচারি লিমিটেড, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ফু-ওয়াং সিরামিক লিমিটেড।
এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বেশ নাজুক। এর তিনটি কোম্পানি সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা দিতে পারেনি।
পরিদর্শনের অনুমতি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, কৃষিবিদ সিড ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল পিএলসি ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, বিচ-হ্যাচারি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ০.
জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না। কোনো কোনোটি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে না এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বিনিয়োগকারীদের বিতরণ করছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানির উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) নিয়মিত করছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানি যথাসময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানাচ্ছে না।
২০২৩ সাল থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় ডিএসই। ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর অনুমতি চেয়ে বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছিল ডিএসই। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি ৩১টি কোম্পানি পরিদর্শনের জন্য ডিএসইকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আরো ২৩টি কোম্পানির সরেজমিন পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। ডিএসইর চিঠির প্রেক্ষিতেই দুই দফায় ৫৪টি কোম্পানি সার্বিক অবস্থা দেখার অনুমতি পেয়েছিল ডিএসই।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিচ হ্যাচারি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, ফু-ওয়াং সিরামিক ‘বি’ ক্যাটাগরিতে, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে, রিং সাইন টেক্সটাইল ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে এবং গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। আর এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কোনো ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়নি। তাই কৃষিবিদ সিডের কোনো ক্যাটাগরিতে নেই।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, কারখানা প্রাঙ্গণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্থান সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ডিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, কারখানা প্রাঙ্গণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্থান পরিদর্শন করার অনুমতি প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ৪ মার্চ ডিএসইর পরিদর্শন দল সরেজমিন গিয়ে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের কারখানা বন্ধ পায়। এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিদর্শন দল সরেজমিন গিয়ে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিংস মিলস লিমিটেডের কারখানাও বন্ধ পায়। এদিকে, গত বছরের ২২ অক্টোবর তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েও বন্ধ পায় ডিএসই। কোম্পানিগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য কারখানা পরিদর্শনে যান ডিএসই’র কর্মকর্তারা। এসব কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসই।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র জ ব এসইস র ন র জন য ড এসইর ড এসই অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ
পাঁচ বছরে দেশের ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে হবে ৫৬ দশমিক ৬ ০ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পাবে ৫০ শতাংশ। অর্থ বিভাগের করা সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ঋণের স্থিতি ছিল আঠারো লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ঋণের এই স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
গত ২ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২০২৬ হতে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ১৫.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে।
পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এটি জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হবে। যদিও বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি’র অনুপাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।
একটি স্থিতিশীল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিশ্চিত করার পথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব সংগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ ব্যয়-বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে ঋণ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিলেও এটি মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি, ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের ওপর অর্থায়নের চাপ থাকছে। অন্যদিকে, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন।
এ প্রেক্ষাপটে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি মধ্যমেয়াদি ঘাটতি অর্থায়ন কৌশল অনুসরণ করছে। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নমনীয় ও অ-নমনীয় ঋণ উল্লেখযোগ্য।
ঋণ প্রোফাইলের এক চিত্র উপস্থাপন করে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার মধ্যে ২১.৫২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১৬ .১০ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের সিংহভাগ (৫৮%) এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে, এরপর রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যার অবদান ৩৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাওয়া গেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি (আইডিএ) থেকে, এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান।
ঋণ স্থিতির মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র অনুপাতে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের শেষে মোট ঋণ জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে পারে জিডিপি’র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে পারে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বন্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এসময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদী চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর।
যদি রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তাহলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
ঢাকা/এস