গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ অব্যাহত, নিহত আরো অর্ধশতাধিক
Published: 7th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা থামছেই না। গতকাল রবিবার (৬ এপ্রিল) গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছে গেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেইর আল-বালাহের পাঁচটি এলাকার বাসিন্দাদের তাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ইসরায়েল গাজার মধ্যাঞ্চলে গতকাল রবিবার নতুন করে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গাজা শহরের পূর্বে আল-নাখিল স্ট্রিটে ইসরায়েলি কামানের গোলাবর্ষণে আট শিশুসহ দশজন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে একটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ফেনীতে বিক্ষোভ
গাজায় স্বাস্থ্যকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করল ইসরায়েল
ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহেও ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আরেকটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, গাজা শহরের পূর্বে শুজাইয়া পাড়া লক্ষ্য করে বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
একই শহরের জেইতুন পাড়ায় আইন জালুত স্কুলের কাছে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় আরো দুইজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়ার সালাম পাড়ায়ও কামানের গোলাবর্ষণে আরো চারজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় গাজার জাওয়াইদা এলাকায় একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে ড্রোন হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আরেকটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে চালানো হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের কিজান রাসওয়ান এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের একটি দলকে লক্ষ্য করে আরেকটি হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি গুলিবর্ষণে এক ফিলিস্তিনি শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। খান ইউনিসের পূর্বে আবাসন আল-কাবিরায় কামানের গোলাবর্ষণে আরো একজন নিহত এবং আরো চারজন আহত হয়েছেন।
এদিকে আল জাজিরার লাইভ খবরে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকালেও গাজার আল-আকসা হাসপাতালের কাছে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
কুদস নিউজ নেটওয়ার্কের বরাত দিয়ে আল জাজিরা বলেছে, গাজার বাস্তুচ্যুত নিরুপায় মানুষেরা আল–আকসা হাসপাতালের কাছে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় প্রচুর হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল খ ন ইউন স ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ